উপনিবেশবাদ বলতে কী বোঝো ? উপনিবেশ স্থাপনের কারণগুলি কী কী ?

উপনিবেশবাদের পরিচয় 

শব্দের উৎস এবং অর্থ: উপনিবেশবাদ শব্দটি ইংরেজি 'Colonialism' শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ। আবার উপনিবেশবাদ বা 'Colonialism' কথাটি এসেছে লাতিন শব্দ 'Colonia' থেকে যার অর্থ হল বিশাল সম্পত্তি বা এস্টেট (estate)।

উপনিবেশবাদ বলতে কী বোঝো ? উপনিবেশ স্থাপনের কারণগুলি কী কী ?


 সাধারণভাবে বলা যায় কোনো দেশ যদি অন্য দেশের ভূখণ্ড বা অঞ্চলকে নিজের অধীনস্থ করে নেয় তাহলে সেই অঞ্চলটির নাম হয় উপনিবেশ। 'Encyclopaedia of Social Sciences' গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে উপনিবেশবাদ হল অন্য দেশের ভৌগোলিক অঞ্চলের ওপর শাসন প্রতিষ্ঠা ও সামগ্রিক নিয়ন্ত্রণ।


উপনিবেশ স্থাপনের কারণসমূহ

 বৃহৎ শক্তি হয়ে ওঠার আকাঙ্ক্ষা : গুরুত্বপূর্ণ উপনিবেশগুলিকে নিজের অধীনে এনে বৃহৎ শক্তি হিসেবে মর্যাদা লাভের আকাঙ্ক্ষারইউরোপীয় দেশগুলি পারস্পরিক প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। এই প্রতিযোগিতায় ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের বৃহৎ রাষ্ট্রশক্তি হয়ে ওঠার আড়ালে তাদের সুবিশাল ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের বিশেষ ভূমিকা ছিল। এশিয়ার মধ্যে ভারতের অফুরন্ত সম্পদের লোভে প্রলুব্ধ হয়ে ব্রিটিশরা এখানে উপনিবেশ গড়ে তোলে। এভাবেই বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশগুলি উপনিবেশ গঠনের মধ্যে দিয়ে বৃহৎ শক্তি হয়ে ওঠার চেষ্টা করে।

 উদ্‌বৃত্ত মূলধন : শিল্পোন্নত দেশগুলিতে মূলধনি শ্রেণি নতুন নতুন শিল্পে মূলধন লগ্নির দ্বারা মুনাফার পাহাড় জমিয়ে উদ্‌বৃত্ত মূলধনের সৃষ্টি করে। এই উদ্‌বৃত্ত মূলধন দেশের বাইরের কোনো শিল্পে লগ্নি করে আরও মুনাফা অর্জনের জন্য মূলধনি শ্রেণি সচেষ্ট হয়ে ওঠে। মূলধনের স্ফীতি পরোক্ষভাবে উপনিবেশবাদ উত্থানের প্রেক্ষাপট রচনা করে। এক্ষেত্রে শিল্পবিপ্লব ও ধনতন্ত্রবাদ উপনিবেশবাদের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে।

 পুঁজিবাদের প্রসার: ইংল্যান্ড-সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শিল্পবিপ্লব ঘটে যাওয়ার পর পুঁজিবাদী অর্থনীতির গুরুত্ব বাড়ে। দেশের মধ্যেকার নানা শিল্পক্ষেত্র ছাড়াও বিদেশের লাভজনক ক্ষেত্রে পুঁজির বিনিয়োগ প্রচেষ্টা দেখা দেয়। পুঁজিবাদের এই সুষ্ঠু প্রসারের জন্য উপনিবেশ গঠনের প্রয়োজনীয়তা বাড়ে, আসলে পুঁজিবাদী অর্থনীতির শেষ কথা হল অধিক থেকে অধিকতর মুনাফা অর্জন। এই অধিকতর মুনাফা অর্জনের তাড়নায় দেশের সীমারেখা ছাড়িয়েও বিদেশের মাটিতে পুঁজিবাদের প্রসার ঘটে। তাই উপনিবেশ গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

সামরিক শক্তিবৃদ্ধির প্রচেষ্টা : সামরিক শক্তি বাড়ানোর প্রচেষ্টা থেকেও উপনিবেশ গড়ে উঠেছে। সামরিক সুযোগসুবিধার কথা বিবেচনা করেই জিব্রাল্টার প্রণালী, সুয়েজ খাল সন্নিহিত অঞ্চল এবং সিঙ্গাপুরে উপনিবেশ স্থাপন করা হয়েছে। সেরকমই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রাধান্য বিস্তার করেছে। সামরিক কারণেই ব্রিটেন সাইপ্রাসে নিজের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করে। আসলে এই অঞ্চল থেকে সহজেই মধ্যপ্রাচ্যের ওপর প্রভাব বিস্তার করা সম্ভব ছিল।

কাঁচামালের আমদানি এবং উৎপাদিত পণ্যের রপ্তানি: শিল্পবিপ্লবের কল্যাণে ইউরোপীয় দেশগুলিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্পপণ্য উৎপাদনের জন্য অফুরন্ত কাঁচামাল জোগানের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। পাশাপাশি উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী বিক্রয়ের জন্য সুবৃহৎ বা আন্তর্জাতিক বাজারেরও দরকার পড়ে। এই উভয় চাহিদা মেটানোর জন্য ইউরোপীয় দেশগুলি উপযুক্ত উপনিবেশের সন্ধান শুরু করে। এশিয়া, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে উপনিবেশ স্থাপিত হয়।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন