সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ক্ষুদ্রাশ্মীয় আয়ুধ বা ক্ষুদ্র প্রস্তর যুগ বলতে কি বোঝ ?

ক্ষুদ্রাশ্মীয় আয়ুধ বা ক্ষুদ্র প্রস্তর যুগ


ক্ষুদ্রাশ্মীয় আয়ুধ বা ক্ষুদ্র প্রস্তর যুগ বলতে কি বোঝ ?


গ্রাহাম ক্লার্ক পাথরের তৈরি প্রাগৈতিহাসিক হাতিয়ার গুলিকে মোট পাঁচটিপ র্যায়ে ভাগ করেছেন। এর মধ্যে পঞ্চম পর্যায়ের হাতিয়ারটি সবচেয়ে উন্নত। মাইক্রোলিথ বা ক্ষুদ্রাশ্মীয় আয়ুধ এই পঞ্চম পর্যায়েরই হাতিয়ার। এই পর্যায়ের হাতিয়ার গুলি খুবই ছোটো। দৈর্ঘ্যে এক থেকে তিন সেন্টিমিটার এবং প্রস্থ এক সেন্টিমিটারেরও কম। এই ধরনের হাতিয়ারগুলি বর্শা, তির বা হারপুন জাতীয় শিকারের অস্ত্রের ফলা হিসেবে ব্যবহার করা হত। এই ফলাগুলিকে যুক্ত করা হত কাঠ, গাছের ডাল বা হাড়ের তৈরি হাতলের সঙ্গে। এই জন্য মাইক্রোলিথ জাতীয় হাতিয়ারের একটি প্রান্ত ধারালো এবং অপর প্রান্তটি চেরা থাকত, হাতলের সঙ্গে লাগানোর সুবিধার জন্য। 

এই ধরনের হাতিয়ারের সবচেয়ে বড়ো সুবিধা ছিল এই যে, ফলাটির ধার নষ্ট হয়ে গেলে বা ভেঙে গেলে গোটা অস্ত্রটিকে বাতিল না করে কেবল ফলাটিকেই বদলে নেওয়া যেত। প্রত্নতত্ত্ববিদ স্টিভেন মিথেন যে কারণে এই ধরনের হাতিয়ারকে আধুনিক যুগের ‘Plug in plug out' প্রযুক্তির সঙ্গে তুলনা করেছেন। মাইক্রোলিথের প্রধান ব্যবহার ছিল শিকার করার সময়। এই ধরনের হাতিয়ারের এখনও পর্যন্ত প্রাচীনতম নিদর্শনটি পাওয়া গেছে আফ্রিকায় পিনাকল পয়েন্ট (Pinnacle Point) প্রত্নক্ষেত্রে।

সময়কালের দিক থেকে যা ইউরোপের অন্তর্বর্তী প্রাচীন প্রস্তর যুগ (Middle Palaeolithic Age) এবং আফ্রিকার মধ্য প্রস্তর যুগ (Middle Stone Age)-এর সমসাময়িক। কিন্তু পিনাকল পয়েন্টের মাইক্রোলিথকে ব্যতিক্রম হিসেবেই মনে করা হয়। কারণ চতুর্থ পর্যায় অর্থাৎ বড়ো ফলা বা ব্লেডজাতীয় হাতিয়ারের আগেই সেখানে পঞ্চম পর্যায়ের হাতিয়ার লক্ষ করা যায়।

মাইক্লোলিথের অধিকাংশ নিদর্শনই পাওয়া গেছে অনতি প্রাচীন প্রস্তর যুগ, এপিপ্যালিওলিথিক যুগ এবং মেসোলিথিক যুগে। প্রাক্-প্রচলিত 40 থেকে 10 হাজার অব্দের মধ্যে। মোটামুটিভাবে বলা যায় যে এই সময় থেকেই ইউরোপ এবং অন্যান্য বেশকিছু অঞ্চলে ম্যামথ বা বড়ো বাইসন জাতীয় দলবদ্ধভাবে বিচরণ করা পশুর সংখ্যা কমে আসতে থাকে। মেগাফনা নামে পরিচিত এই জাতীয় পশুর সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার জন্য দায়ী ছিল আবহাওয়ার পরিবর্তন এবং সম্ভবত অতিরিক্ত শিকার। মেগাফনা জাতীয় শিকার কমে এলে তুলনায় ছোটো পশু, হরিণ জাতীয় প্রাণী, বিভিন্ন ধরনের পাখি বা জলজ প্রাণী শিকারের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এই ধরনের প্রাণী শিকারের ক্ষেত্রে মাইক্রোলিথ যুগে তির, বল্লম বা হারপুন খুবই উপযুক্ত হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল। ক্রমশ নব্য প্রস্তর যুগে কৃষি এবং পশুপালন অর্থনীতির গুরুত্ব বৃদ্ধি পেলে ক্ষুদ্রাশ্মীয় আয়ুধের সংখ্যা কমতে থাকে। তবে এমনকি নব্য প্রস্তর যুগেও শিকারি সংগ্রাহক উপজাতিগুলির মধ্যে মাইক্রোলিথ জাতীয় হাতি য়ারের গুরুত্ব বজায় ছিল।



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ক্রিপস মিশন কেন ভারতে এসেছিল ? ক্রিপস মিশনের প্রস্তাব‌ গুলি কী ছিল ? এক্ষেত্রে ভারতীয়দের কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল ?

সূচনা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ভারতের ব্রিটিশ সরকার ভারতবাসীর আর্থিক ও সামরিক সাহায্য প্রার্থনা করে। যদিও কংগ্রেস এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়, ফলে এক রাজনৈতিক অচলাবস্থা দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ মন্ত্রীসভার সদস্য স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপসের নেতৃত্বে ক্রিপস মিশন ভারতে আসে (১৯৪২ খ্রি.) ও এক প্রস্তাব পেশ করে যা ক্রিপস প্রস্তাব নামে পরিচিত। ক্রিপস্ প্রস্তাব সম্পর্কে ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল বলেছিলেন—আমাদের সততা প্রমাণের জন্যই ক্রিপস মিশন অপরিহার্য ('The Cripps Mission is indispensable to prove our honesty of purpose') ! পটভূমি / কারণ    ক্রিপস্ মিশনের ভারতে আসার পটভূমি বা কারণগুলি হলো –  [1] জাপানি আক্রমণ প্রতিরোধ : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন (১৯৪১ খ্রি., ৭ ডিসেম্বর) জাপান হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের পার্লহারবারে অবস্থিত মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করে অক্ষশক্তির পক্ষে যুদ্ধে যোগদান করলে বিশ্ব রাজনীতিতে এক গুরুতর পরিবর্তন ঘটে। একে একে ফিলিপাইন, ইন্দোচিন, ইন্দোনেশিয়া, মালয় ও ব্রহ্মদেশ বিধ্বস্ত করে (১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৮ মার্চ) জাপান ভারতের নিকটে এসে হাজ...

ম্যানর ব্যবস্থা বলতে কি বোঝ ?

ম্যানর ব্যবস্থা        সামন্ততন্ত্রের ভিতর থেকে তার আবশ্যিক অঙ্গ হিসাবে ম্যানর প্রথার বিকাশ ঘটেছিল। ম্যানর প্রথা প্রকৃতপক্ষে সামন্তযুগের কৃষিভিত্তিক সমাজে একটি অর্থনৈতিক সংগঠন, একে সামন্ততান্ত্রিক উৎপাদন পদ্ধতির গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ম্যানর প্রথা অনেক সময় সিনোরীয় প্রথা নামেও পরিচিত। মূলত সামন্ততন্ত্রে ভূস্বামী কর্তৃক কৃষক শোষণের যে পরিকাঠামো গড়ে উঠেছিল ম্যানর প্রথা ছিল তারই সাংগঠনিক ভিত্তি। সামন্তপ্রভু এবং ম্যানরে বসবাসকারী শ্রমজীবী মানুষের খাদ্যের জোগান আসত ম্যানর থেকে।        ম্যানরের অভ্যন্তরীণ কাঠামো ছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ। একটি ম্যানরের জমিকে দুইভাগে ভাগ করা হত—(1) সামন্তপ্রভুর খাস জমি বা ডিমেইনে, (2) স্বাধীনস্বত্বসম্পন্ন জমি বা ভিলেইন। এই জমির মাধ্যমে কৃষক সামন্তপ্রভুর সঙ্গে একটি অচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ থাকত। সামন্ততন্ত্রের মতো ম্যানর প্রথার উৎস রয়েছে প্রাচীন রোমান ও জার্মানদের স্থানীয় সংগঠনের মধ্যে। ম্যানর প্রথার প্রধান শক্তি ছিল ভূমিদাস। এই ভূমিদাসরা আক্রমণকারী যোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে ভূমিদাসে রূপান্তরিত হয়। ...

খুত ও মুকদ্দম কাদের বলা হত? কে, কেন তাদের কঠোরভাবে দমন করার চেষ্টা করেন ?

খুত ও মুকদ্দম         বাজার দর নিয়ন্ত্রণ এবং জীবন নির্বাহের ব্যয় হ্রাস করেই আলাউদ্দিন খলজি সন্তুষ্ট হতে পারেননি। রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থাকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য তিনি বিভিন্ন ব্যবস্থা অবলম্বন করার জন্য সচেষ্টও হয়ে ওঠেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি রাজস্ব বিভাগের সংস্কারের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে শুরু করেন। রাষ্ট্রের অধীনে খাদ্য ও জমি বৃদ্ধির জন্য তিনি সর্বপ্রথম বিভিন্ন শ্রেণীর অবলম্বন করার জন্য সচেষ্ট হয়ে ওঠেন। তিনি মুসলিম অভিজাত সম্প্রদায় ও ধার্মিক ব্যক্তিদের মিলক্, ইনাম, ইদ্দ্ররাৎ এবং ওয়াকফ জমি রাষ্ট্রের অধীনে পুনরায় আনয়নের চেষ্টা করেন। মুসলিম অভিজাত সম্প্রদায়র ও ধার্মিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পরই সুলতান অলাউদ্দিন খলজি খুত, চৌধুরী ও মুকদ্দম নামে পরিচিত হিন্দু অভিজাতবর্গের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। “খুত” শব্দটির প্রকৃত সংজ্ঞা সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও সম্ভবত পরবর্তীকালে যার জমিদার নামে পরিচিতি লাভ করেন আলাউদ্দিনের-রাজত্বকালে তাঁরা খুত নামে পরিচিত ছিলেন। “চৌধুরী” ছিলেন পরগণার প্রধান ব্যক্তি এবং “মুকদ্দম” ছিলেন গ্রামের প্রধান। রাষ্ট্রের প্...