জাদুঘরের সংজ্ঞা
(1) আন্তর্জাতিক জাদুঘর পর্ষদের অভিমত: আন্তর্জাতিক জাদুঘর পর্ষদ অর্থাৎ আইকম (International Council of Museums বা ICOM) জাদুঘরের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে বলেছে, জাদুঘর হল অলাভজনক, জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত এবং স্থায়ী সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান যা শিক্ষালাভ, জ্ঞানচর্চা ও আনন্দলাভের উদ্দেশ্যে মানব ঐতিহ্যের স্পর্শযোগ্য ও স্পর্শ-অযোগ্য জিনিসপত্র সংগ্রহ করে, সংরক্ষণ করে, প্রদর্শন করে এবং সেগুলি নিয়ে গবেষণা করে।
(2) বাংলা আকাদেমির অভিমত : পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির ‘আকাদেমি বিদ্যার্থী বাংলা অভিধান' অনুসারে, যে-ঘরে নানা অত্যাশ্চর্য জিনিস বা প্রাচীন জিনিস সংরক্ষিত থাকে তা-ই হল জাদুঘর।
(3) সাধারণ সংজ্ঞা: সাধারণভাবে বলা যায় জাদুঘর হল বিভিন্ন ঐতিহাসিক উপাদানের সংগ্রহশালা, যেখানে ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক, শিল্প-বিষয়ক প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন সংরক্ষণ করে তা জনসাধারণের উদ্দেশ্যে স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। এক কথায়, বিভিন্ন পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন সংগ্রহ করে সেগুলি যেসব প্রতিষ্ঠান বা ভবনে সংরক্ষণ করে রাখা হয় সেসব প্রতিষ্ঠান বা ভবনকে জাদুঘর বলে।
অতীত পুনর্গঠনে জাদুঘরের ভূমিকা কার্যাবলি
অতীতকালের সময়কে তুলে ধরার ক্ষেত্রে জাদুঘরগুলির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। যেমন—
(1) ঐতিহাসিক সামগ্রী: জাদুঘরগুলিতে অতীতের বিভিন্ন সামগ্রী সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হয়। এসব ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলি বর্তমানকালের মানুষের সামনে অতীতের সেই মুহূর্তের জীবনধারা তুলে ধরার চেষ্টা করে।
(2) প্রতিকৃতি: অতীতের বিভিন্ন নিদর্শনের প্রতিকৃতি বা মডেল তৈরি করে তা সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরার বিষয়ে জাদুঘরগুলি উদ্যোগ নেয়। অতীতের আসল নিদর্শন না দেখেও জাদুঘরের এই মডেলগুলির মাধ্যমে আমরা অতীতকে অনেকটা বুঝতে পারি।
(3) ইতিহাস-চেতনা: জাদুঘর ইতিহাস-বিষয়ক বিভিন্ন উদ্যোগের দ্বারা জনগণের মধ্যে ইতিহাস-চেতনা বৃদ্ধি করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়—স্বাধীন বাংলাদেশে বিভিন্ন জাদুঘর দেখে দেশবাসীর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-চেতনা বৃদ্ধি পায় ।
(4) গবেষণা: জাদুঘরে সংরক্ষিত বিভিন্ন নিদর্শনগুলি নিয়ে গবেষণার ফলে অতীতের বহু অজানা দিকের উন্মোচন ঘটতে পারে।