সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের কারণ ও গুরুত্ব আলোচনা করো।

ভূমিকা: ভারতের জাতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের সর্বশেষ বৃহৎ মরিয়া গণ প্রচেষ্টা হল ভারত ছাড়ো আন্দোলন। গান্ধিজি ব্রিটিশ সরকারের উদ্দেশ্যে 'হরিজন' পত্রিকায় লেখেন (১৯৪২ খ্রি., ২৪ মে) – ভারতকে ঈশ্বরের হাতে ছেড়ে দাও, না হলে তাকে নৈরাজ্যের হাতে ছেড়ে চলে যাও (Leave India to God. If that is too much, then leave her. to anarchy')।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের পটভূমি / কারণ 

[1] ক্রিপস প্রস্তাবের ব্যর্থতা : ক্রিপস প্রস্তাবের ব্যর্থতায় ভারতবাসী অনুভব করে যে—ইংরেজ সরকার কখনোই স্বেচ্ছায় তাদেরকে স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেবে না। তাই স্বাধীনতা পেতে হলে সরাসরি ইংরেজদের সঙ্গে সংগ্রামে লিপ্ত হওয়া ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পথ নেই।

[2] ব্রিটিশ দমননীতি : ব্রিটিশ সরকার তার সামরিক বাহিনী দ্বারা ভারতবাসীর ওপর যে অকথ্য নির্যাতন, অত্যাচার চালিয়ে আসছিল তাতে ভারতীয়রা বিক্ষুদ্ধ হয়ে মুক্তির পথ খুঁজতে শুরু করেছিল। ব্রিটিশরা দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয়দের কালা আদমি বলে উপেক্ষা করে আসার পাশাপাশি ভারতীয় নারীদের প্রতি অশালীন আচরণ শুরু করলে ভারতীয়দের ধৈর্যচ্যুতি ঘটে।

[3] দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনের তুলনায় খাদ্যের জোগান কম হওয়ায় মূল্যবৃদ্ধি ঘটে। চালের খুচরো দাম বেড়ে হয় ৩০-৫০ টাকা প্রতি মণ, কেরোসিন ও কাপড়, ওষুধপত্র প্রভৃতি দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়ে। এই সুযোগে কালোবাজারি ও মজুতদাররা ফায়দা তোলার চেষ্টা করে। ফলে ব্রিটিশের ওপর ভারতবাসীর বিশ্বাস সম্পূর্ণ লুপ্ত হয়—তারা ব্রিটিশ শাসনের অবসানের লক্ষ্যে সর্বশেষ গণ আন্দোলনে শামিল হয়।

[4] স্বাধীনতার তীব্র আকাঙ্ক্ষা : স্বাধীনতার জন্য ভারতবাসী আর বিন্দুমাত্র অপেক্ষা করতে রাজি ছিল না। অসহযোগ, আইন-অমান্য আন্দোলন ভারতবাসীর স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে তীব্রতর করে তুলেছিল। ভারতবাসী চেয়েছিল শেষবারের মতো এক সর্বভারতীয় গণ আন্দোলন গড়ে তুলে ব্রিটিশের কাছ থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে। নিতে। তাই ঐতিহাসিক অমলেশ ত্রিপাঠী লিখেছেন —“ভারত ছাড়ো আন্দোলনে গান্ধি যতটা নেতা, ততটাই জনগণের ইচ্ছার দাস।”

[5] শীর্ষ নেতাদের জঙ্গি মনোভাব : ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে দেশের শীর্ষনেতাদের জঙ্গি মানসিকতা, বিশেষত গান্ধিজির অনমনীয় মনোভাব আর একটি গণ আন্দোলনের পটভূমি রচনা করেছিল। গান্ধিজি দেশবাসীর উদ্দেশে 'করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে' মন্ত্র ঘোষণা করেন। জওহরলাল এ প্রসঙ্গে বলেছেন—গান্ধিজিকে ইতিপূর্বে আর কখনও এতটা ব্রিটিশবিরোধী দেখা যায়নি।

[6] জাপানি আক্রমণের সম্ভাবনা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রণাঙ্গনে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে জাপানের অগ্রগতি ভারতবাসীর মনে যুগপৎ এক আশা ও আশঙ্কার জন্ম দেয়। তারা আশঙ্কা করে এবার ব্রিটিশ শাসিত ভারতেও জাপান আক্রমণ করবে। ব্রিটিশের স্বার্থরক্ষার যুদ্ধে মরবে সাধারণ ভারতবাসী। এই আশঙ্কায় ভারতীয় নেতারা এক ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রাম গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। মৌলানা আজাদের মতে, জাপানি আক্রমণের সম্ভাবনাই গান্ধিজিকে এক গণ আন্দোলনের দিকে ঠেলে দেয়।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের গুরুত্ব / তাৎপর্য 

ভারত ছাড়ো আন্দোলন ছিল ভারতে ব্রিটিশ শাসন অবসানের অন্তিম পদক্ষেপ। “১৯৪২-এর বিদ্রোহ বাস্তবিকই ছিল সৈনিকের যুদ্ধ। সেনাপতি ছিলেন দ্বিধাগ্রস্ত; কিন্তু সৈনিকগণের ভূমিকা ছিল গৌরবজনক। কারণ তাঁরা দেশের স্বাধীনতার জন্য শহিদের ন্যায় জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।” ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদারের এই মন্তব্য থেকেই ভারত ছাড়ো আন্দোলনের গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়। যেসব কারণে এই আন্দোলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলি হল—

[1] স্বাধীনতার অজেয় সংকল্প: ১৯৪২-এর ভারত ছাড়ো আন্দোলন ছিল ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্যায়। ব্রিটিশ শাসনের প্রতি ভারতবাসীর ঘনীভূত ক্ষোভ ও তা থেকে মুক্তির জন্য অজেয় সংকল্প এই বিদ্রোহে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।

[2] সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা : মুসলিম লিগ এই আন্দোলনে যোগ না দিলেও আন্দোলন চলাকালে কোথাও কোনো সাম্প্রদায়িক বিরোধ বাধেনি। তাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও হিন্দু-মুসলিম ঐক্য ছিল এই আন্দোলনের এক বিশাল সম্পদ।

[3] জাতীয় বিপ্লব : বিয়াল্লিশের আন্দোলনের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে জওহরলাল নেহরু বলেছিলেন—নেতা নেই, সংগঠন নেই, উদ্যোগ আয়োজন কিছু নেই, কোনো মন্ত্ৰবল নেই, অথচ একটা অসহায় জাতি স্বতঃস্ফূর্তভাবে কর্মপ্রচেষ্টার আর কোনো পথ না পেয়ে বিদ্রোহী হয়ে উঠল—এ দৃশ্য বাস্তবিকই বিস্ময়ের। এই আন্দোলনকে তিনি ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের সঙ্গে তুলনা করেছেন। বড়োলাট লর্ড লিনলিথগো-ও এই আন্দোলনকে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের পর সবচেয়ে বড়ো বিদ্রোহ বলে উল্লেখ করেছেন।

[4] ব্রিটিশ শাসনের মৃত্যুঘণ্টা : অধ্যাপক সুমিত সরকারের মতে—বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকদের অংশগ্রহণের ফলেই আগস্ট বিদ্রোহ এক দুর্দমনীয় আন্দোলনে পরিণত হয়েছিল। এই অতুলনীয় গণবিদ্রোহ ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীর মনে এই বোধ সুস্পষ্টভাবেই জাগিয়ে দিয়েছিল যে, ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান আর বেশি দূরে নেই। ভারতের স্বাধীনতা লাভ একটি অবধারিত ব্যাপার। বাকি কেবল ক্ষমতা হস্তান্তর কীভাবে হবে বা স্বাধীনতা লাভের পর ভারতের সরকার কীভাবে সংগঠিত হবে সেটা ঠিক করা। তাই একথা বলা হয় যে, বিয়াল্লিশের আন্দোলন বা ভারত ছাড়ো আন্দোলন ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মৃত্যুঘণ্টাধ্বনি শুনিয়েছিল।

[5] স্বাধীনতা অর্জনের ভিত্তিস্থাপন : বিয়াল্লিশের আন্দোলনের গভীরতা ও ব্যাপকতা যে ভারতের স্বাধীনতার ভিত্তিভূমি রচনা করেছিল, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। একদিকে যখন সুভাষচন্দ্রের সশস্ত্র বিপ্লবী তৎপরতায় ভারতের ব্রিটিশ সরকার আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল, ঠিক তখনই 'ভারত ছাড়ো' আন্দোলনের তীব্রতা সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ সরকারের প্রশাসনিক ভিত্তিকে নড়বড়ে করে দিয়েছিল।

[6] ব্রিটিশের বোধোদয়: ভারত ছাড়ো আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে ভারতবাসীর যে তীব্র স্বাধীনতাকাঙ্ক্ষা প্রকাশিত হয়, তা ব্রিটিশের বোধোদয় ঘটায়। ব্রিটিশ সরকার অনুভব করে যে এবার তাদের ভারত ছাড়ার সময় হয়েছে। আন্দোলনের গভীরতা উপলব্ধি করে লিনলিথগোর পরবর্তী বড়োলাট লর্ড ওয়াভেল লিখেছিলেন, যুদ্ধ শেষ হলে ভারতকে স্বাধীনতা দিতে বাধ্য হওয়ার আগেই ভারতীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করা উচিত।

[7] কংগ্রেসি মর্যাদার পুনঃপ্রতিষ্ঠা : আন্দোলন চলাকালীন মহাত্মা গান্ধির অনশন জাতির হৃদয়ে কংগ্রেসের মর্যাদাকে পুনরায় অধিষ্ঠিত করে। এই আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই সংশয়াতীতভাবে প্রমাণিত হয় কংগ্রেসের জনপ্রিয়তা ব্যাপক এবং সর্বাত্মক।

[৪] নতুন নেতৃত্বের আবির্ভাব : আন্দোলন পরিচালনার প্রয়োজনে নতুন নতুন নেতার আবির্ভাবের মধ্যে দিয়ে ভারতবাসীর সংগ্রামী শক্তি ও স্বাধীনতা লাভের ইচ্ছা যে কত প্রবল ও প্রচণ্ড তাও সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।

[9] ভারতের স্বাধীনতা সুনিশ্চিতকরণ : সর্বোপরি, মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে এই সংগ্রাম অহিংসা নীতিকে সম্পূর্ণভাবে মেনে চলতে ব্যর্থ হলেও, ভারতীয় স্বাধীনতাকে সুনিশ্চিত করেছিল। এই দিকটি বিবেচনা করলে আগস্ট আন্দোলন ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক চিরস্মরণীয় অধ্যায়।

[10] গণ আন্দোলন হিসেবে : ভারত ছাড়ো আন্দোলন প্রকৃত অর্থেই হয়ে উঠেছিল সর্ববৃহৎ জাতীয় গণ আন্দোলন। এই আন্দোলনে শ্রমিক ও কৃষকসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি স্বতঃস্ফূর্তভাবে শামিল হয়ে একে গণ আন্দোলনের রূপ দান করে। নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটিও এই আন্দোলনকে ‘গণযুদ্ধ' আখ্যা দিয়েছিল।

উপসংহার : ভারত ছাড়ো আন্দোলনের গুরুত্ব এখানেই যে—এই আন্দোলনই ঠিক করে দেয়, ভারতবাসী স্বাধীনতা পাচ্ছে। কবে সেই স্বাধীনতা আসছে শুধু সেই প্রশ্নের উত্তরটুকুই বাকি থাকে। প্রকৃতপক্ষে এই আন্দোলনের তীব্রতাকে ভয় পেয়েই ব্রিটিশ সরকার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিল যে, ভারতবাসীকে এবার স্বাধীনতা প্রদান করতে হবে।




মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ক্রিপস মিশন কেন ভারতে এসেছিল ? ক্রিপস মিশনের প্রস্তাব‌ গুলি কী ছিল ? এক্ষেত্রে ভারতীয়দের কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল ?

সূচনা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ভারতের ব্রিটিশ সরকার ভারতবাসীর আর্থিক ও সামরিক সাহায্য প্রার্থনা করে। যদিও কংগ্রেস এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়, ফলে এক রাজনৈতিক অচলাবস্থা দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ মন্ত্রীসভার সদস্য স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপসের নেতৃত্বে ক্রিপস মিশন ভারতে আসে (১৯৪২ খ্রি.) ও এক প্রস্তাব পেশ করে যা ক্রিপস প্রস্তাব নামে পরিচিত। ক্রিপস্ প্রস্তাব সম্পর্কে ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল বলেছিলেন—আমাদের সততা প্রমাণের জন্যই ক্রিপস মিশন অপরিহার্য ('The Cripps Mission is indispensable to prove our honesty of purpose') ! পটভূমি / কারণ    ক্রিপস্ মিশনের ভারতে আসার পটভূমি বা কারণগুলি হলো –  [1] জাপানি আক্রমণ প্রতিরোধ : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন (১৯৪১ খ্রি., ৭ ডিসেম্বর) জাপান হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের পার্লহারবারে অবস্থিত মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করে অক্ষশক্তির পক্ষে যুদ্ধে যোগদান করলে বিশ্ব রাজনীতিতে এক গুরুতর পরিবর্তন ঘটে। একে একে ফিলিপাইন, ইন্দোচিন, ইন্দোনেশিয়া, মালয় ও ব্রহ্মদেশ বিধ্বস্ত করে (১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৮ মার্চ) জাপান ভারতের নিকটে এসে হাজ...

ম্যানর ব্যবস্থা বলতে কি বোঝ ?

ম্যানর ব্যবস্থা        সামন্ততন্ত্রের ভিতর থেকে তার আবশ্যিক অঙ্গ হিসাবে ম্যানর প্রথার বিকাশ ঘটেছিল। ম্যানর প্রথা প্রকৃতপক্ষে সামন্তযুগের কৃষিভিত্তিক সমাজে একটি অর্থনৈতিক সংগঠন, একে সামন্ততান্ত্রিক উৎপাদন পদ্ধতির গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ম্যানর প্রথা অনেক সময় সিনোরীয় প্রথা নামেও পরিচিত। মূলত সামন্ততন্ত্রে ভূস্বামী কর্তৃক কৃষক শোষণের যে পরিকাঠামো গড়ে উঠেছিল ম্যানর প্রথা ছিল তারই সাংগঠনিক ভিত্তি। সামন্তপ্রভু এবং ম্যানরে বসবাসকারী শ্রমজীবী মানুষের খাদ্যের জোগান আসত ম্যানর থেকে।        ম্যানরের অভ্যন্তরীণ কাঠামো ছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ। একটি ম্যানরের জমিকে দুইভাগে ভাগ করা হত—(1) সামন্তপ্রভুর খাস জমি বা ডিমেইনে, (2) স্বাধীনস্বত্বসম্পন্ন জমি বা ভিলেইন। এই জমির মাধ্যমে কৃষক সামন্তপ্রভুর সঙ্গে একটি অচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ থাকত। সামন্ততন্ত্রের মতো ম্যানর প্রথার উৎস রয়েছে প্রাচীন রোমান ও জার্মানদের স্থানীয় সংগঠনের মধ্যে। ম্যানর প্রথার প্রধান শক্তি ছিল ভূমিদাস। এই ভূমিদাসরা আক্রমণকারী যোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে ভূমিদাসে রূপান্তরিত হয়। ...

খুত ও মুকদ্দম কাদের বলা হত? কে, কেন তাদের কঠোরভাবে দমন করার চেষ্টা করেন ?

খুত ও মুকদ্দম         বাজার দর নিয়ন্ত্রণ এবং জীবন নির্বাহের ব্যয় হ্রাস করেই আলাউদ্দিন খলজি সন্তুষ্ট হতে পারেননি। রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থাকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য তিনি বিভিন্ন ব্যবস্থা অবলম্বন করার জন্য সচেষ্টও হয়ে ওঠেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি রাজস্ব বিভাগের সংস্কারের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে শুরু করেন। রাষ্ট্রের অধীনে খাদ্য ও জমি বৃদ্ধির জন্য তিনি সর্বপ্রথম বিভিন্ন শ্রেণীর অবলম্বন করার জন্য সচেষ্ট হয়ে ওঠেন। তিনি মুসলিম অভিজাত সম্প্রদায় ও ধার্মিক ব্যক্তিদের মিলক্, ইনাম, ইদ্দ্ররাৎ এবং ওয়াকফ জমি রাষ্ট্রের অধীনে পুনরায় আনয়নের চেষ্টা করেন। মুসলিম অভিজাত সম্প্রদায়র ও ধার্মিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পরই সুলতান অলাউদ্দিন খলজি খুত, চৌধুরী ও মুকদ্দম নামে পরিচিত হিন্দু অভিজাতবর্গের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। “খুত” শব্দটির প্রকৃত সংজ্ঞা সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও সম্ভবত পরবর্তীকালে যার জমিদার নামে পরিচিতি লাভ করেন আলাউদ্দিনের-রাজত্বকালে তাঁরা খুত নামে পরিচিত ছিলেন। “চৌধুরী” ছিলেন পরগণার প্রধান ব্যক্তি এবং “মুকদ্দম” ছিলেন গ্রামের প্রধান। রাষ্ট্রের প্...