পলাশি ও বক্সারের যুদ্ধের ফলাফলের তুলনামূলক আলোচনা
পলাশির যুদ্ধে ১৭৫৭, ২৩ জুন ভাগীরথীর তীরে পলাশীর আম্রকাননে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদৌল্লার সাথে ক্লাইভের নেতৃত্ব ইংরেজদের যে লড়াই হয়েছিল তা ভারত ইতিহাসে পলাশীর যুদ্ধ নামে পরিচিত।
এই যুদ্ধে সিরাজের পরাজয়ের ফলে বাংলার স্বাধীনতা সূর্য প্রায় ২০০ বছরের জন্য অস্তমিত হয়। তাই এই যুদ্ধের ফলাফল ছিল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। এই পলাশির যুদ্ধের ফলাফল বা গুরত্বগুলি হল-
পলাশির যুদ্ধের হতাহতের সংখ্যা ও ব্যাপকতার দিক থেকে এটি ছিল একটি খণ্ডযুদ্ধ মাত্র। এই যুদ্ধে নবাবের পক্ষে ৫০০ জন এবং ইংরেজদের পক্ষে মাত্র ২২জন সেনার মৃত্যু হয়। পলাশির যুদ্ধের হতাহতের সংখ্যা ও ব্যাগপকতার দিক থেকে এটি ছিল একটি খণ্ডযুদ্ধ মাত্র। মীরজাফর ব্রিটিশ সাথে মিলে নবাবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল।
এই যুদ্ধে হেরে ভারতের পূর্বদিকে সমৃদ্ধ অঞ্চল বিদেশিদের অধীনে গেল। ইংরেজরা ভারতে বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী হয়ে পড়ে। তারা নৃপতি বানানোর চেষ্টায় উদ্যত হয়। নিজেদের অনুগত মানুষকে বাংলার সিংহাসনে বসিয়ে বাংলা থেকে বিপুল অর্থ ইউরোপে পাঠাতে শুরু করে। According to Tarachand, "The defeat of plassey exposed all the Indian weaknesses."
পলাশির যুদ্ধে জয়লাভ করে ইংলিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নিজেদের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করে। তারপর ব্রিটিশ শক্তির প্রসার ঘটায়।
বাংলা থেকে যে কোনভাবে টাকা লুঠ করে তা ইউরোপে পাঠাত। যুদ্ধ পরবর্তীকালে ইংরেজ কোম্পানি ও কর্মচারীদের প্রচুর অর্থ পুরস্কার দিতে বাধ্য হয়। বাংলার অর্থনৈতিক কাঠামো বিধস্ত হয়ে পড়ে। এই লুণ্ঠনকে পলাশির লুন্ঠন বলে।
ফরাসিরা বাংলা থেকে বিতাড়িত হয় ব্রিটিশদের দ্বারা পলাশীর যুদ্ধের পর। বাংলার অর্থে ইংরেজরা দাক্ষিণাত্যে ফরাসীদের বিরুদ্ধে জয়লাভ করে।
পলাশী যুদ্ধের পর ইংরেজরা এদেশের সমাজ ও সভ্যতায় নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার চেষ্টা করায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রবেশ ও প্রসার ঘটে। যদুনাথ সরকার বলেছেন-"on 23rd june, 1757, the middle ages of India ended and her modern age began."
বক্সারের যুদ্ধ ১৭৬৪ ২২ অক্টোবর মোগলসম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম, অযোধ্যার নবাব সুজা-উদদৌলা এবং বাংলার নবাব মীরকাশিমের মিলিত বাহিনীর সঙ্গে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বক্সার প্রান্তরে যে যুদ্ধ হয়, তাকে বক্সার যুদ্ধ বলে বর্ণিত। (Plassey was cannonade but Buxar was a decisive battle)
ব্রিটিশ প্রভুত্ব বাংলা তথা ভারতে বিস্তার করলে বক্সারের যুদ্ধ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। Ramsay Moore বলেছেন– বক্সার বাংলার উপর কোম্পানির শাসন-শৃঙ্খলাকে দূর্দান্তভাবে স্থাপন করেছিল।
ভারতীয় শাসকদের অযোগ্যতা প্রমাণ করে বক্সারের যুদ্ধ। কিছু বক্সারের যুদ্ধে বাংলার নবাব, অযোধ্যার নবাব ও মোঘল সম্রাট একসাথে পরাজিত হয়।
নবাবের ক্ষমতা হ্রাস করে প্রবলভাবে বাংলার নবাবের পক্ষে ইংরেজ বিরোধিতার আর কোন সুযোগ রইল না। সেইসময় থেকে বাংলার নবাব কোম্পানির বৃত্তিভোগী নবাবে পরিণত হয়।
কোম্পানির লর্ড ক্লাইভ বার্ষিক ২৬লক্ষ টাকার বিনিময়ে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করে ১৭৬৫ সালে। এই চুক্তি অনুসারে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা, বিহার, ও উড়িষ্যার রাজস্ব আদায়ের দায়িত্বভার পান।
বাংলার কুটীর শিল্প ও বাঙালির ব্যবসা বাণিজ্যর ধ্বংস সাধন করে ব্রিটিশরা একচেটিয়াভাবে শিল্প বাণিজ্যের উপর কর্তৃত্ব বিস্তার করে।
এইভাবে বণিকের মানদণ্ড দেখা দেয় রাজদণ্ড রূপে। বক্সারের যুদ্ধ ভারতের ইতিহাসে যুগান্তকারী ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।