সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ফিজিওক্রাটস কারা ছিলেন ?

ফিজিওক্রাটস 


ফিজিওক্রাটস কারা ছিলেন ?


  রাজনৈতিক চিন্তার বাইরে অর্থনৈতিক চিন্তাও অষ্টাদশ শতকের ফ্রান্সে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছিল। সপ্তদশ শতকে ও অষ্টাদশ শতকের গোড়ায় অর্থনৈতিক তত্ত্বের মূল ভিত্তি ছিল মার্কেন্টাইলবাদ। মার্কেন্টাইলবাদী তত্ত্ব সংরক্ষণবাদী অর্থনীতিকে সমর্থন করত। কিন্তু নতুন প্রজন্মের অর্থনীতিবিদরা মার্কেন্টাইলবাদী তত্ত্বকে খারিজ করে ধ্রুপদী অর্থনৈতিক উদারবাদের ভিত্তি প্রস্ত্র স্থাপন করেছিল। স্কটিশ অর্থনীতিবিদ এডাম স্মিথ যাবতীয় বাধানিষেধ থেকে অর্থনীতিকে মুক্ত করার কথা বলেন। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তিনি নূন্যতম রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের পক্ষপাতী ছিলেন এবং মুক্ত বাজার প্রতিযোগিতা ও অবাধ বাণিজ্যকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। তাঁর অর্থনৈতিক চিন্তা "Laissez-faire" নামে পরিচিত।

     সমকালীন ফ্রান্সেও একদল অর্থনৈতিক চিন্তাবিদও একই ধরণের অর্থনীতির কথা বলেছিলেন। তাঁদের বলা হত ফিজিওক্র্যাট অর্থনীতিবিদ। ফিজিওক্রাট চিন্তাবিদরা প্রচার করেছিলেন, সম্পদের উৎস সোনা বা রুপা নয়; একমাত্র জমিই সম্পদের উৎস। তাঁরা কৃষিতে ও কৃষিপণ্যের বাণিজ্যে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের তীব্র বিরোধী ছিলেন। ফ্রান্সে ফিজিওক্রাট চিন্তাধারার শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি ফ্রাঙ্কোয়েস কুইসনে (১৬৯৪-১৭৭৪)। তিনি রাজতন্ত্রের কাছে খাদ্যশস্য বাণীজ্য মুক্ত করার দাবি জানিয়েছিলেন। ফরাসী সরকার অনেক সময় আইন- শৃঙ্খলা রক্ষার উদ্দেশ্যে দ্রব্যমূল্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করত। এই নীতির তীব্র বিরোধী ছিলেন কুইসনে। ফিজিওক্রাটিক মতাদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ষোড়শ লুই-এর অর্থমন্ত্রী তুর্গো ১৭৭০-এর দশকের গোড়ায় খাদ্যশস্যের অবাধ বাণিজ্য নীতি ঘোষণা করেছিলেন। খারাপ ফলনের সঙ্গে মজুতদারী যুক্ত হবার ফলে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল। ফ্রান্সের নানা স্থানে খাদ্য দাঙ্গা দেখা দেয়। তখন ফরাসী সরকার পুনরায় পণ্য মূল্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে বাধ্য হয়। তথাপি একথা অস্বীকার করা যায় না যে, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের তীব্র বিরোধীতা করে ফিজিওক্রাট চিন্তাবিদরা নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্রকে আক্রমণ করেছিলেন।


📖আরও পড়ুন 

1. ফরাসী বিপ্লবে রুশোর অবদান কি ছিল

2. কার্লসবার্ড ডিক্রি কি


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ক্রিপস মিশন কেন ভারতে এসেছিল ? ক্রিপস মিশনের প্রস্তাব‌ গুলি কী ছিল ? এক্ষেত্রে ভারতীয়দের কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল ?

সূচনা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ভারতের ব্রিটিশ সরকার ভারতবাসীর আর্থিক ও সামরিক সাহায্য প্রার্থনা করে। যদিও কংগ্রেস এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়, ফলে এক রাজনৈতিক অচলাবস্থা দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ মন্ত্রীসভার সদস্য স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপসের নেতৃত্বে ক্রিপস মিশন ভারতে আসে (১৯৪২ খ্রি.) ও এক প্রস্তাব পেশ করে যা ক্রিপস প্রস্তাব নামে পরিচিত। ক্রিপস্ প্রস্তাব সম্পর্কে ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল বলেছিলেন—আমাদের সততা প্রমাণের জন্যই ক্রিপস মিশন অপরিহার্য ('The Cripps Mission is indispensable to prove our honesty of purpose') ! পটভূমি / কারণ    ক্রিপস্ মিশনের ভারতে আসার পটভূমি বা কারণগুলি হলো –  [1] জাপানি আক্রমণ প্রতিরোধ : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন (১৯৪১ খ্রি., ৭ ডিসেম্বর) জাপান হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের পার্লহারবারে অবস্থিত মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করে অক্ষশক্তির পক্ষে যুদ্ধে যোগদান করলে বিশ্ব রাজনীতিতে এক গুরুতর পরিবর্তন ঘটে। একে একে ফিলিপাইন, ইন্দোচিন, ইন্দোনেশিয়া, মালয় ও ব্রহ্মদেশ বিধ্বস্ত করে (১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৮ মার্চ) জাপান ভারতের নিকটে এসে হাজ...

ম্যানর ব্যবস্থা বলতে কি বোঝ ?

ম্যানর ব্যবস্থা        সামন্ততন্ত্রের ভিতর থেকে তার আবশ্যিক অঙ্গ হিসাবে ম্যানর প্রথার বিকাশ ঘটেছিল। ম্যানর প্রথা প্রকৃতপক্ষে সামন্তযুগের কৃষিভিত্তিক সমাজে একটি অর্থনৈতিক সংগঠন, একে সামন্ততান্ত্রিক উৎপাদন পদ্ধতির গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ম্যানর প্রথা অনেক সময় সিনোরীয় প্রথা নামেও পরিচিত। মূলত সামন্ততন্ত্রে ভূস্বামী কর্তৃক কৃষক শোষণের যে পরিকাঠামো গড়ে উঠেছিল ম্যানর প্রথা ছিল তারই সাংগঠনিক ভিত্তি। সামন্তপ্রভু এবং ম্যানরে বসবাসকারী শ্রমজীবী মানুষের খাদ্যের জোগান আসত ম্যানর থেকে।        ম্যানরের অভ্যন্তরীণ কাঠামো ছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ। একটি ম্যানরের জমিকে দুইভাগে ভাগ করা হত—(1) সামন্তপ্রভুর খাস জমি বা ডিমেইনে, (2) স্বাধীনস্বত্বসম্পন্ন জমি বা ভিলেইন। এই জমির মাধ্যমে কৃষক সামন্তপ্রভুর সঙ্গে একটি অচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ থাকত। সামন্ততন্ত্রের মতো ম্যানর প্রথার উৎস রয়েছে প্রাচীন রোমান ও জার্মানদের স্থানীয় সংগঠনের মধ্যে। ম্যানর প্রথার প্রধান শক্তি ছিল ভূমিদাস। এই ভূমিদাসরা আক্রমণকারী যোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে ভূমিদাসে রূপান্তরিত হয়। ...

খুত ও মুকদ্দম কাদের বলা হত? কে, কেন তাদের কঠোরভাবে দমন করার চেষ্টা করেন ?

খুত ও মুকদ্দম         বাজার দর নিয়ন্ত্রণ এবং জীবন নির্বাহের ব্যয় হ্রাস করেই আলাউদ্দিন খলজি সন্তুষ্ট হতে পারেননি। রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থাকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য তিনি বিভিন্ন ব্যবস্থা অবলম্বন করার জন্য সচেষ্টও হয়ে ওঠেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি রাজস্ব বিভাগের সংস্কারের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে শুরু করেন। রাষ্ট্রের অধীনে খাদ্য ও জমি বৃদ্ধির জন্য তিনি সর্বপ্রথম বিভিন্ন শ্রেণীর অবলম্বন করার জন্য সচেষ্ট হয়ে ওঠেন। তিনি মুসলিম অভিজাত সম্প্রদায় ও ধার্মিক ব্যক্তিদের মিলক্, ইনাম, ইদ্দ্ররাৎ এবং ওয়াকফ জমি রাষ্ট্রের অধীনে পুনরায় আনয়নের চেষ্টা করেন। মুসলিম অভিজাত সম্প্রদায়র ও ধার্মিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পরই সুলতান অলাউদ্দিন খলজি খুত, চৌধুরী ও মুকদ্দম নামে পরিচিত হিন্দু অভিজাতবর্গের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। “খুত” শব্দটির প্রকৃত সংজ্ঞা সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও সম্ভবত পরবর্তীকালে যার জমিদার নামে পরিচিতি লাভ করেন আলাউদ্দিনের-রাজত্বকালে তাঁরা খুত নামে পরিচিত ছিলেন। “চৌধুরী” ছিলেন পরগণার প্রধান ব্যক্তি এবং “মুকদ্দম” ছিলেন গ্রামের প্রধান। রাষ্ট্রের প্...