ভাস্কো-দ্য-গামা
১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে অটোমান তুর্কীগণ পূর্ব রোম সাম্রাজ্যের রাজধানী কনস্ত্যান্তিনোপল জয় করে নেয়। এর ফলে প্রাচ্য জগতের সঙ্গে ইউরোপের বাণিজ্যিক যোগাযোগের স্থলপথগুলো সম্পূর্ণভাবে মুসলিম শক্তির কর্তৃত্বাধীন হয়ে পড়ে। ফলে ইউরোপের বণিক সম্প্রদায় অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং জলপথে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য তারা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে। এই সময় সামুদ্রিক শক্তি হিসাবে পোর্তুগাল যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল এবং পোর্তুগালের শাসনকর্তাগণও এই ব্যাপারে খুব উৎসাহী ছিলেন। ১৪১৭ খ্রিস্টাব্দে ভাস্কো-দ্য-গামা নামে এক পোর্তুগীজ নাবিক আফ্রিকার উপকূল অতিক্রম করে ভারতবর্ষের সঙ্গে যোগাযোগের নতুন পথ আবিষ্কার করতে উদ্যোগী হন। ভাস্কো-দ্য-গামা ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দে উত্তমাশা অন্তরীপ অতিক্রম করে দক্ষিণ ভারতের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত কালিকট বন্দরে উপস্থিত হন। কালিকটের রাজা জামোরিন সেই সময় তাকে কোন বাণিজ্য কুঠি স্থাপনের অনুমতি দেননি। কিন্তু ইউরোপ থেকে ভারতে আসার জলপথ আবিষ্কার করে ভাস্কো-দ্য-গামার মনে নতুন উদ্দীপনার সৃষ্টি হয় এবং ভৌগোলিক আবিষ্কারকে বাণিজ্যিক প্রয়োজনে পুরোপুরিভাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করতে শুরু করেন। ১৫০২ খ্রিস্টাব্দে ভাস্কো- দ্যা-গামা দ্বিতীয়বার ভারতে আসেন এবং কালিকট ও কোচিনের রাজার বিবাদের সুযোগ নিয়ে তিনি কোচিন ও কানানোর এই দুটি স্থানে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করেন। ইউরোপের জাতিগুলোর মধ্যে পোর্তুগীজরাই প্রথমে ভারতে আসে এবং এখানে বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করে। কোচিন শহরে পোর্তুগীজরা দুর্গও নির্মাণ শুরু করে এবং নিকটবর্তী রাজ্যগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কও স্থাপন করে।
ভাস্কো-দ্য-গামা কর্তৃক ভারতে আসার ফলে ইউরোপের সঙ্গে ভারতের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক স্থাপিত হয়। পোর্তুগীজদের পথ অনুসরণ করে ইউরোপের অন্যান্য জাতিরা ভারতে আসতে শুরু করে। ফলে ভারতের বহির্বাণিজ্য দ্রুত প্রসার লাভ করার সুযোগ পায়।