ভিতারি স্তম্ভলিপি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত টিকা লেখো।

ভিতারি স্তম্ভলিপি

প্রথম কুমারগুপ্তের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র স্কন্দগুপ্ত গুপ্ত সাম্রাজ্যের সিংহাসনে বসেন। অনেকের মতে, কুমারগুপ্তের মৃত্যুর পর ঘটোৎকচগুপ্ত কিছুকাল সিংহাসনে বসেছিলেন। রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে, কুমারগুপ্তের মৃত্যুর পর সিংহাসন দখলকে কেন্দ্র করে ভ্রাতৃবিরোধ শুরু হয় ও শেষপর্যন্ত ৪৫৫ খ্রিস্টাব্দে স্কন্দগুপ্ত সম্রাট হন। ফদগুপ্তের রাজত্বকাল সম্পর্কে জানার জন্য দুটি লিপির সাহায্য নিতে হয়, যথা— জুনাগড় শিলালিপি ও ভিতারি মুণ্ডলিপি | ডিতারি লিপিটি সংস্কৃত ভাষায় লেখা এবং প্রায় ২৪ ফুট উঁচু স্তত্ত্বের ওপর মোট ১৯টি লাইনের এই লিপিটি তৈরি করা হয়েছিল। বর্তমান উত্তরপ্রদেশের গাজীপুরের নিকট ভিতারি অবস্থিত। ঐতিহাসিক আর পি ত্রিপাঠীর মতে এই লিপিটি থেকে স্কন্দগুপ্তের সঙ্গে পুষ্যমিত্র ও চুন শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামের বিবরণ পাওয়া যায়।


ভিতারি স্তম্ভলিপি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত টিকা লেখো।


বিষয়বস্তু

ভিতারি লিপির প্রথম পাঁচটি লাইনের মধ্যে সমুদ্রগুপ্ত, দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত এবং প্রথম কুমারগুপ্তের গৌরবময় জীবনের কথা বলা হয়েছে। সমুদ্রগুপ্তকে ইন্দ্র, বরুণ প্রমুখ দেবতার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। তেমনই গোদান, স্বর্গদান প্রভৃতি দানশীলতার কথাও উল্লিখিত রয়েছে। তা ছাড়া এই লিপিতে স্কন্দগুপ্ত সমুদ্রগুপ্তের সময় থেকে রাজাদের প্রধান রানিদের নাম উল্লেখ করেছেন। কিন্তু নিজের মাতার নাম উল্লেখ করেননি। তাই অনেকে মনে করেন স্কন্দগুপ্ত হয়তো বৈধ উত্তরাধিকারী ছিলেন না।


পুষ্যমিত্রদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ

ভিতারি লিপির ষষ্ঠ লাইন থেকে স্কন্দগুপ্তের রাজত্বকাল এবং কৃতিত্বের বিবরণ পাওয়া যায়। তেমনই স্কন্দগুপ্তের রাজনৈতিক দক্ষতা, সাহস এবং শত্রুদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের পরিচয় মেলে। এই লিপিতে বলা হয়েছে স্কন্দগুপ্ত যখন গুপ্ত সাম্রাজ্যকে পুনরায় শক্তিশালী করে তুলতে শুরু করেছিলেন তখন পুষ্যমিত্রদের সঙ্গে যুদ্ধ বাধে এবং স্কন্দগুপ্ত এই শক্তিকে পরাজিত করে নিজের সামরিক মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।


হুনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ

ভিতারি লিপির শেষ চারটি লাইনে হুনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের বিররণ আছে। এই লিপিতে হুনদের সঙ্গে যুদ্ধের কোনো তারিখ দেওয়া হয়নি। ঐতিহাসিক আর পি ত্রিপাঠীর মতে গঙ্গানদীর তীরবর্তী উপকূলে উত্তরপ্রদেশের কোনো একটি স্থানে হুনদের সঙ্গে যুদ্ধ হয়েছিল এবং হুনরা চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয়েছিল। এর ফলে প্রায় অর্ধ শতাব্দীকাল হুনরা আর ভারত আক্রমণ করার সাহস পায়নি। সুতরাং বলা যায়, ভিতারি উত্তলিপি ছিল স্কন্দগুপ্তের সামরিক বিজয় সম্পর্কে এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এটি থেকে যেমন গুপ্ত রাজাদের বংশাবলির পরিচয় মেলে তেমনই স্কন্দগুপ্তের বাকাটক, পুষ্যমিত্র, হুন আক্রমণ প্রভৃতি সম্পর্কে বিবরণ পাওয়া যায়।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন