তৃতীয় বিশ্বের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো ।

তৃতীয় বিশ্ব 

সংজ্ঞা: 'তৃতীয় বিশ্ব' বলতে ঠিক কী বোঝায় এ নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতভেদ লক্ষ করা যায়। ফ্রানজ ফ্যানন নামক এক আলজিরিয়ান লেখক প্রথম 'তৃতীয় বিশ্ব' কথাটি ব্যবহার করেন। তাঁর মতে, তৃতীয় বিশ্ব বলতে পুঁজিবাদী ও সমাজতান্ত্রিক দেশসমূহের বাইরে অবস্থিত স্বাধীনতার জন্য ও সাম্রাজ্যবাদী শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকায় অবস্থিত প্রাক্তন উপনিবেশগুলিকে বোঝায়। জ ডি বি মিলার-এর মতে, কমিউনিস্ট নয়, আবার পুঁজিবাদীও নয় এমন সব দেশকে তৃতীয় বিশ্ব বলে। মিলার অবশ্য লাতিন আমেরিকার দেশগুলিকে তৃতীয় বিশ্বের বাইরে রেখেছেন। কারণ তাঁর মতে, লাতিন আমেরিকার দেশগুলির সঙ্গে তৃতীয় বিশ্বভুক্ত আফ্রো-এশিয়ার দেশগুলির অনেক বৈসাদৃশ্য আছে।

তৃতীয় বিশ্ব হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এক নতুন ধারণা। সাধারণভাবে বলা যায়, ঠান্ডা লড়াইয়ে রত রুশ-মার্কিন উভয় জোটের বাইরে এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশগুলিই তৃতীয় বিশ্বে নামে পরিচিত। সাধারণভাবে এরা সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী, দারিদ্র্যপীড়িত ও পশ্চাৎপদ। এদের অনেকেই জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের শরিক। 


তৃতীয় বিশ্বের বৈশিষ্ট্য :


তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির যে সব সাধারণ বৈশিষ্ট্য গুলি লক্ষ্য করা যায় সেগুলি হল - 

স্বাধীনতলাভঃ তৃতীয় শিশুর দেশ গুলির বাধীনতা লাভ জিশ তৃতীয় বিশ্বের বস বৈশিষ্ট। দীর্ঘকাল পরাধীন থাকার ফলে যে সব সংকীর্ণতা মানষপটে স্থান পেয়েছিল স্বাধীনতা সেগুলিকে ছিন্ন করে মুক্তির স্বাদ এনে দিয়েছিল।

সাম্যবাদের অধীন : সমাসবাদের অধীন দীর্ঘদিন ধরে ঔপনিবেশিক শক্তিগুলির দ্বারা শোষণ ও অত্যচার তৃতীয় বিশ্বের দেশগুগির অনতম বৈশিষ্ট।

নয়-উপনিবেশবাদের স্বীকারঃ নয় উপনিবেশগদের শোষণ ও অত্যাচার তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

কৃষি নির্ভরতা: কৃষি নির্ভরতা তৃতীয় শির দেশ গুলিীর অন্যতম বৈশিট । উপনিবেশিক দেশগুলি শোষণে জর্জারিত ছিল বলে শিল্পে উন্নত হতে পারি নি।

পশ্চাৎপদতাঃ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলি সার্বিক দিক থেকে উন্নত দেশের তুলনায় অনেক বেশি পশ্চাৎপদতা। উন্নত পুঁজিবাদী দেশগুলির কাছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা অধীনস্থ হয়ে পড়েছে। এই দেশগুলি শিল্প বিকাশের ক্ষেত্রে একেবারেই অনগ্রসর কারিগরি ও কৃৎকৌশলগত দিক থেকে তারা পরনির্ভরশীল আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রসারের ব্যাপারে উন্নত পুঁজিবাদী দেশগুলির নির্দেশ মেনে কাজ করতে হয়।

সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে পশ্চাৎপদতা: তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলি সাংস্কৃতিক দিক থেকে উন্নত পুঁজিবাদী দেশের তুলনায় অনেকখানি পিছিয়ে আছে । এখানে উৎপাদনের উপকরণ গুলি উন্নত না হওয়ার কারণে উৎপাদন সামগ্রী গুণগত মান উন্নত পুঁজিবাদী দেশগুলির তুলনায় অনেক কম । কাজেই বিশ্ববাজারে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে বাধা পরলোক্ষিত হয়, তাছাড়া উপনিবেশ গুলিতে উপনিবেশবাদ বিরোধী আন্দোলনের জন্য তাদের রাজনৈতিক ধারায় আত্মনির্ভরশীলতা পরিলক্ষিত হয়।

জীবনযাত্রা: উন্নত দেশগুলি জাতীয় আয় ও তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির জাতীয় আয়ের মধ্যে অনেকখানি ফারাক রয়েছে। এই কারণে তৃতীয় বিশ্বের দেশ গুলির মানুষের জীবন যাত্রার মান একেবারে নিম্নগামী । এইসব দেশের শাসন ব্যবস্থা, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যপরিসেবা, বিজ্ঞান-কারিগর এবং প্রযুক্তিগত বিদ্যা শিক্ষার অভাব উন্নত দেশের থেকে অনেকখানি পিছিয়ে। 

সামাজিক সচলতার অভাব: তৃতীয় বিশ্বের দেশ গুলিতে শিক্ষার ব্যাপকতা, বিজ্ঞানের অগ্রগতি প্রভৃত্তি ক্ষেত্রে উন্নত পুঁজিবাদী দেশের তুলনায় অনেকখানি পিছিয়ে থাকার দরুন সামাজিক সচলতার অভাব পরিলক্ষিত হয়। আবার রাজনীতির সঙ্গে ধর্মীয় মিশ্রণ ঘটিয়ে কোন কোন দেশের শাসন ব্যবস্থা মৌলবাদের শিকারে পরিণত হয়েছে।


উপসংহার: তৃতীয় বিশ্বের দেশ গুলি জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে সামিল হয়ে পড়েছে । এই আন্দোলনের মধ্যে অবস্থান করেই তারা কোন রাষ্ট্রের পক্ষপাতিত্ব করেন।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন