সার্ক (SAARC) প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট আলোচনা করো । সার্ক-এর উদ্দেশ্য কী ছিল ?

‘সার্ক’ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট

[1] জিয়াউর রহমানের শ্রীলঙ্কা সফর : দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিকে নিয়ে কোনো আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ সর্বপ্রথম ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয়। এ বিষয়ে সর্বপ্রথম উদ্যোগ নেন স্বাধীন বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান (১৯৩৬-১৯৮১ খ্রি.)। তিনি ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে শ্রীলঙ্কা সফরকালে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার উদ্দেশ্যে একটি আঞ্চলিক সংস্থা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন এবং নিজে সক্রিয় উদ্যোগ নেন।

[2] সার্ক গঠনের সিদ্ধান্ত : দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিকে নিয়ে একটি সহযোগিতা সংস্থা প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের বিদেশমন্ত্রীগণ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের উদ্যোগে অনুপ্রাণিত হন। পরবর্তী কয়েক বছরে কলম্বো (১৯৮১ খ্রি.), কাঠমান্ডু (১৯৮১ খ্রি.), ইসলামাবাদ (১৯৮২ খ্রি.), ঢাকা (১৯৮৩ খ্রি.) প্রভৃতি স্থানে একাধিক সম্মেলনে মিলিত হন। অবশেষে এসব দেশের বিদেশমন্ত্রীগণ ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দের দিল্লি সম্মেলনে সমবেত হয়ে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (South Asian Association for Regional Cooperation) বা সার্ক গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। 

[3] সার্ক-এর প্রতিষ্ঠা : জিয়াউর রহমানের উদ্যোগ বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে (৭-৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশগুলিকে নিয়ে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা বা সার্ক গঠনের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয় ।


‘সার্ক’-এর উদ্দেশ্য

ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রী রাজীব গান্ধি বলেছিলেন যে, সার্ক দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে তার সদস্য রাষ্ট্রগুলির আত্মনির্ভরতার সমস্যার সমাধান, দারিদ্র্য দূরীকরণ, সাক্ষরতার প্রসার, অপুষ্টি ও রোগ দূরীকরণের সঙ্গে যুক্ত। সার্ক বা দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা প্রতিষ্ঠার বিভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য রয়েছে। এই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলি হল—

[1] উন্নয়ন: দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের দেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির দ্বারা সার্কের সদস্যগুলির অর্থনৈতিক বিকাশ, সামাজিক অগ্রগতি ও সাংস্কৃতিক উন্নতি ঘটানো।

[2] আত্মনির্ভরতা : সার্কের প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের স্বাধীনতা রক্ষা এবং যৌথ আত্মনির্ভরতার শক্তি বৃদ্ধি করা।

[3] উৎসাহ প্রদান: অর্থনৈতিক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যায় সক্রিয় সহযোগিতার বিষয়ে সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে উৎসাহিত করা।

[4] যোগাযোগ বৃদ্ধি : সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে তথ্যের আদানপ্রদান এবং সেসব দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি করা।

[5] জনকল্যাণ : দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির জনগণের কল্যাণসাধন এবং তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটানো।

[6] সহযোগিতা : সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, কারিগরি, বিজ্ঞান প্রভৃতি ক্ষেত্রে সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলির সঙ্গেও এই সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।

[7] বোঝাপড়া : সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস, বোঝাপড়া ও সংবেদনশীলতার পরিবেশ তৈরি করা।

[8] হস্তক্ষেপ না করা: সদস্য রাষ্ট্রগুলির ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষা ও অন্যান্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা।

[9] নিরাপত্তা বিধান: দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ করা।

[10] শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান : সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখা।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন