আলভার ও নায়নার কারা ছিলেন।

আলভার ও নায়নার : 

নবম শতাব্দী থেকে দক্ষিণ ভারতে ব্রাহ্মণ্য হিন্দুধর্মের বিকাশ ঘটে। এই সময় শৈব ও বৈষ্ণব ধর্মেরও প্রভাব বৃদ্ধি পায় । লিঙ্গায়েত ধৰ্ম, অদ্বৈতবাদ প্রভৃতির তত্ত্ব প্রচারিত হয়। আলভার (আলবার)ও নায়নার সম্প্রদায়ের মাধ্যমে দক্ষিণ ভারতে এই সময় ভক্তি আন্দোলনের সূচনা ঘটে।


আলভার ও নায়নার কারা ছিলেন।


আলভার সম্প্রদায়

সপ্তম শতাব্দীতে তামিল অঞ্চলে আলবার সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে। এরা দক্ষিণ ভারতে বৈষ্ণব ধর্মের মধ্য দিয়ে ভক্তিবাদের প্রচার করেছিলেন। দক্ষিণ ভারতের মোট ১২ জন আলবার সাধকের কথা জানা যায়। এদের মধ্যে পোয়গাই, ভূতাত্তা, কুলশেখর, মধুরকবি, পেরিয়ালবার, আন্ডাল প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। শেষ আলবার সাধকের নাম তিরুমঙ্গাই।

আলভার মতবাদ:
আলবার সাধকরা বৈষ্ণব ধর্মের মাধ্যমে সহজ ও সরল ভাষায় সাধারণ মানুষের কাছে ভক্তিবাদ প্রচার করেন । তাঁরা জাতিভেদ প্রথা মানতেন না । তাঁরা প্রচার করতেন ঈশ্বর কোনো বিশেষ জাতির জন্য নয়। সাধারণ মানুষ ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করতে পারে। বিশুদ্ধ ভক্তি ও ঈশ্বরের প্রতি প্রেমের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরকে পাওয়া সম্ভব। আলবারগণ আনুষ্ঠানিক পূজার্চনার পরিবর্তে ভক্তির মাধ্যমে ঈশ্বর লাভের ধারণা প্রচার করেছিলেন।

নায়নার সম্প্রদায়

আলবারদের মতো দক্ষিণ ভারতে নায়নার সম্প্রদায় শৈবধর্মের মাধ্যমে ভক্তিবাদের প্রচার করেন। নায়নারদের ৬৩জন সাধকের কথা জানা যায়। এঁদের মধ্যে তিরুমূলর ছিলেন অন্যতম। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য সাধকেরা ছিলেন অপ্পর, সম্বন্দর, মানিক্যবাচকর, সুন্দরব প্রমুখ।

নায়নার মতবাদ:
নায়নার ভক্তিবাদীগণ শৈব ধর্মের আধ্যাত্মিক চিন্তাধারা প্রচার করেন। এঁরা জাতিভেদ প্রথা মানতেন না। সমস্ত জাতি ও ধর্মের মানুষের কাছে জাতিভেদ ভুলে গিয়ে ভক্তির মাধ্যমে ঈশ্বরলাভের কথা নায়নার সাধকরা প্রচার করেন। আলবারদের মতো তাঁরাও বিশুদ্ধ ভক্তি এবং ঈশ্বরের প্রতি প্রেমকে গুরুত্ব দেন। তাঁরা ভক্তিগীতি রচনা করে সাধারণ মানুষের কাছে নিজেদের মতবাদ প্রচার করেন এবং প্রচলিত হিন্দুধর্মের প্রথাপদ্ধতির বিরোধিতা করেন।

সমাজের ওপর প্রভাব

আলবার ও নায়নারদের ভক্তি আন্দোলন দক্ষিণ ভারতের সমাজ জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। এর ফলে—[1] সাধারণ ও নিম্নবর্ণের বহু মানুষ হিন্দুধর্মের পরিবর্তে এই ধর্মমত গ্রহণ করতে শুরু করে। [2] জৈন ও বৌদ্ধ ধর্ম দক্ষিণ ভারত থেকে বিলুপ্তির পথে চলে যায় । [3] ব্রাক্ষ্মণ সম্প্রদায়ের প্রাধান্য হ্রাস পায়। শৈব ব্রাহ্মণ নামে এক নতুন ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয় । [4] রাষ্ট্রীয় আনুকূল্যে দক্ষিণ ভারতে বৈষুব ও শৈব ধর্মের প্রচার ঘটে। [5] ভক্তিবাদীদের মধ্য দিয়ে তামিল সাহিত্য ও সংগীতের বিকাশ ঘটে।





তথ্য সূত্র - বিএ ইতিহাস সেমিস্টার নোট ( ড. প্রদীপ কুমার মন্ডল)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন