সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হাে-চি-মিনের নেতৃত্বে ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

ভূমিকা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়কালে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ইতিহাসে এক দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত ছিল ভিয়েতনাম যুদ্ধ। হো-চি-মিনের নেতৃত্বে, ভিয়েতনামবাসীরা দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে (১৯৪৫-৭৫ খ্রি.) যে সংগ্রাম চালিয়েছিল তা ইতিহাসে ভিয়েতনাম যুদ্ধ নামে পরিচিত। তৃতীয় বিশ্বের উপনিবেশবাদ-বিরোধী সংগ্রামকে গৌরবান্বিত করেছিল এই ভিয়েতনাম যুদ্ধ। ভিয়েতনাম যুদ্ধে ভিয়েতনামিরা প্রথমে ফরাসি সাম্রাজ্যবাদ ও পরে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে ধ্বংস করে স্বাধীনতা অর্জন করে।

ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধ

[1] পটভূমি  

যেসব ঘটনা ভিয়েতনাম যুদ্ধের পটভূমি রচনায় সাহায্য করেছিল, সেগুলি হল-

  • [i] দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ঔপনিবেশিক বিরোধিতা: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে থেকেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্তর্গত মালয়, শ্যাম (থাইল্যান্ড), ব্রহ্মদেশ (মায়ানমার) সহ বিভিন্ন দেশে উপনিবেশ-বিরোধী সম্মেলন শুরু হয়েছিল। যার অংশীদার হয়েছিল হো-চি-মিনের নেতৃত্বে ভিয়েতনামও। 
  • [ii] রুশ-জাপান যুদ্ধের ফলাফল: রুশ-জাপান যুদ্ধের ফলাফল জাপানের অনুকূলে যাওয়ায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবাসীর মতো ভিয়েতনামবাসীর মন থেকেও শ্বেতাঙ্গ ভীতি দূর হয়। তারা বিশ্বাস করতে শুরু করে যে, ভিয়েতনামেও ফরাসি সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসন ঘটানো সম্ভব। 
  • [iii] চিনের প্রজাতান্ত্রিক বিপ্লব : ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে চিনে প্রজাতান্ত্রিক বিপ্লব এবং সান-ইয়াৎ-সেনের জাতীয়তাবাদী ভাবধারায় উদ্‌বুদ্ধ হয়ে ভিয়েতনামবাসীরা ফরাসি সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য তৈরি হয়।  
  • [iv] আমেরিকার হস্তক্ষেপ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবশেষে যেভাবে ভিয়েতনামের অভ্যন্তরীণ সমস্যায় হস্তক্ষেপ করে তাতে উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনামবাসীদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আরও বেড়ে যায়, পরিণামে যুদ্ধ বাধে।

[2] প্রথম পর্ব (১৯৪৫-৫৪ খ্রি.)

  • [i] ফরাসি নীতি : ফ্রান্স প্রথমে দক্ষিণ ইন্দোচিনে আধিপত্য কায়েম করেছিল। কিন্তু ফ্রান্স শুধুমাত্র তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে রাজি ছিল না। সে চেয়েছিল গোটা ইন্দোচিনে ফরাসি আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে। অপরদিকে হো-চি-মিন চেয়েছিলেন ভিয়েতনামের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই যুদ্ধের সূচনা ঘটে।
  • [ii] ভিয়েতমিল-ফ্রান্স চুক্তি: ভিয়েতনাম সংঘর্ষের প্রথম দিকে 'ভিয়েতমিন' ও ফ্রান্সের মধ্যে এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় (১৯৪৬ খ্রি.. ১ মার্চ), যাতে ফ্রান্স ভিয়েতনামকে ইন্দোচিন ফেডারেশন ও ফরাসি ইউনিয়নের অংশরূপে স্বীকৃতি দেয়া। কিন্তু এর সাত মাস পরেই ফ্রান্স হাইফং অঞ্চলে বোমা নিক্ষেপ করে ৬ হাজার নিরীহ অসামরিক ভিয়েতনামিকে হত্যা করলে সংঘর্ষ শুরু হয়।
  • [iii] ইন্দোচিন স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠা: ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর থেকে টানা তিন বছর সংঘর্ষের পর বাও দাইয়ের নেতৃত্বে ইন্দোচিনে এক স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ এই নবগঠিত সরকারকে স্বীকৃতি দেয় (১৯৫০ খ্রি., ফেব্রুয়ারি)। এদিকে উত্তর ভিয়েতনামে হো- চি- মিনের সরকারকে চিন ও সোভিয়েত রাশিয়া সাহায্য করে।
  • [iv] নেভারে প্ল্যান– দিয়েন-বিয়েন-ফু ঘটনা: ফরাসি বাহিনী ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের শেষদিক থেকে একের পর এক রণক্ষেত্রে হারতে থাকে। এই অবস্থায় ফরাসি সেনাপতি নেভারে ভিয়েতমিনদের সম্পূর্ণ ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে এক নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করেন, যা 'নেভারে প্ল্যান' নামে পরিচিত। এই পরিকল্পনা অনুসারে ফ্রান্স উত্তর ভিয়েতনামের টংকিং-এর দিয়েন-বিয়েন-ফু নামে একটি স্থানে অস্ত্রশস্ত্র সমেত একটি দুর্ভেদ্য ঘাঁটি নির্মাণ করে। কিন্তু সেনাপতি জেনারেল নগুয়েন গিয়াপের নেতৃত্বে ভিয়েতমিন সেনারা ফরাসি সেনাদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করে।

[3] জেনেভা সম্মেলন (১৯৫৪ খ্রি.) : জেনেভা সম্মেলনে ২০ জুলাই যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পাদিত হয়। নির্ধারিত হয়—

  • [i] ১৭° অক্ষরেখা বরাবর ভিয়েতনামকে দুভাগে ভাগ করা হবে। 
  • [ii] ওই অক্ষরেখার উত্তরাঞ্চলে ভিয়েতমিনদের এবং দক্ষিণালে ফরাসি নিয়ন্ত্রণাধীন ন-দিন-দিয়েমের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। 
  • [iii] উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনামের কোথাও কোনো বিদেশি সেনা থাকবে না। 
  • [iv] ভিয়েতনামের ওই বিভাজন হবে সম্পূর্ণ অস্থায়ী। 
  • [v] শান্তিপূর্ণ উপায়ে দুই ভিয়েতনামের মিলনের জন্য রাষ্ট্রসংঘ গঠিত একটি তদারকি কমিশনের নেতৃত্বে নির্বাচন আহ্বান করা হবে (১৯৫৬ খ্রি., জুলাই)।

[4] দ্বিতীয় পর্ব (১৯৫৬-৭৫)

  • [i] জেনেভা সম্মেলনের ব্যর্থতা: জেনেভা সম্মেলনের (১৯৫৪ খ্রি.) দ্বারা ভিয়েতনাম সমস্যার সমাধান হয়নি। জেনেভা সম্মেলন ভিয়েতনাম যুদ্ধের একটা অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটালেও আর একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।
  • [ii] যুদ্ধে আমেরিকার অংশগ্রহণ : ইন্দোচিনে হো-চি-মিনের প্রভাব-প্রতিপত্তিকে আটকানোর জন্য ফরাসি নিয়ন্ত্রাণাধীন ন-দিন-দিয়েম-কে দক্ষিণ ভিয়েতনামের রাষ্ট্রপতি পদে বসানো হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ ভিয়েতনামে ব্যাপক আর্থিক ও সামরিক সাহায্য পাঠাতে শুরু করে।
  • [iii] ভিয়েতকংদের সঙ্গে সংঘর্ষ : উত্তর ভিয়েতনামে মার্কিন অপচেষ্টাকে রুখে দিয়ে হো-চি-মিন বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী কর্মসূচি রূপায়ণের দ্বারা নিজের সরকারের জনপ্রিয়তা অক্ষুণ্ণ রাখেন। অপরদিকে দক্ষিণ ভিয়েতনামে দিয়েম সরকার নির্বাচনের বিরোধিতা করলে, সমগ্র ইন্দোচিন জুড়ে প্রবল বিক্ষোভ দেখা দেয়। দক্ষিণ ভিয়েতনামে নবগঠিত জাতীয় মুক্তি ফ্রন্টের যোদ্ধা ভিয়েতকংদের সঙ্গে দিয়েম সরকারের সংঘর্ষ বাঁধে।
  • [iv] স্বৈরাচারী দিয়েম সরকারের পতন : ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ ভিয়েতকংদের বিরুদ্ধে মার্কিন ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম বাহিনী একজোট হয়ে আক্রমণ করে। ভিয়েতনামে মার্কিন হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে গোটা বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যায়। এদিকে গণ- অভ্যুত্থানে দিয়েম সরকারের পতন ঘটে (১৯৬৩ খ্রি., নভেম্বর)।
  • [v] স্বাধীন ভিয়েতনামের আত্মপ্রকাশ : ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জানুয়ারি উত্তর ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে আমেরিকার সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ভিয়েতনাম থেকে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র তার সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে নেয়। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাস নাগাদ দক্ষিণ ভিয়েতনামের জেনারেল ভ্যান-মিন সায়্যানে ভিয়েতকংদের কাছে আত্মসমর্পণ করলে উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম ঐক্যবদ্ধ হয়। আত্মপ্রকাশ করে স্বাধীন ঐক্যবদ্ধ সমাজতান্ত্রিক ভিয়েতনাম প্রজাতন্ত্রের (Socialist Republic of Vietnam)।

ভিয়েতনাম যুদ্ধের গুরুত্ব 

[1] আমেরিকার মর্যাদাহানিতে : ভিয়েতনাম যুদ্ধ থেকে আমেরিকাকে শেষ পর্যন্ত লজ্জা, অপমান ও কলঙ্কের বোঝা নিয়ে প্রত্যাবর্তন করতে হয়েছিল। এতে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমেরিকার মর্যাদাহানি ঘটেছিল।

[2] গেরিলা লড়াইয়ের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে : ভিয়েতনামবাসীর গেরিলা-পদ্ধতিতে মরণপণ লড়াই বিশ্বের এক শ্রেষ্ঠ শক্তির প্রথাগত যুদ্ধপদ্ধতিকে তছনছ করে দিয়ে এই যুদ্ধের গুরুত্বকে অনেক বাড়িয়ে দেয়। 

[3] মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির দৈন্যতা প্রকাশে এই যুদ্ধে আমেরিকার হস্তক্ষেপ বিশ্ববাসী যেমন অনুমোদন করেনি,তেমনি মার্কিন জনমতও এ ব্যাপারে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। ফলে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির দৈন্যদশা প্রকট হয়।

[4] জনসমর্থনের অপরিহার্যতা প্রমাণ : জনগণের সাহায্য ও সমর্থন ছাড়া যে সাফল্য লাভ অসম্ভব, তা এই যুদ্ধে আরও একবার প্রমাণিত হয়।

উপসংহার : ভিয়েতনাম যুদ্ধ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উপনিবেশ-বিরোধী সংগ্রামের দীর্ঘ অধ্যায়। মরগেনথাউ তাই ভিয়েতনাম যুদ্ধকে মার্কিন শক্তিনীতির অপপ্রয়োগ বলে অভিহিত করেছেন। রাষ্ট্রসংঘের সচিব জেনারেল উথান্টের মতে—ভিয়েতনামের যুদ্ধ কমিউনিস্ট আগ্রাসনের যুদ্ধ নয়, এটি বিদেশি, বিশেষত আমেরিকানদের বিরুদ্ধে একটি জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ (The war in Vietnam was not a war of communist aggression but a war of national)।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ক্রিপস মিশন কেন ভারতে এসেছিল ? ক্রিপস মিশনের প্রস্তাব‌ গুলি কী ছিল ? এক্ষেত্রে ভারতীয়দের কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল ?

সূচনা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ভারতের ব্রিটিশ সরকার ভারতবাসীর আর্থিক ও সামরিক সাহায্য প্রার্থনা করে। যদিও কংগ্রেস এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়, ফলে এক রাজনৈতিক অচলাবস্থা দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ মন্ত্রীসভার সদস্য স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপসের নেতৃত্বে ক্রিপস মিশন ভারতে আসে (১৯৪২ খ্রি.) ও এক প্রস্তাব পেশ করে যা ক্রিপস প্রস্তাব নামে পরিচিত। ক্রিপস্ প্রস্তাব সম্পর্কে ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল বলেছিলেন—আমাদের সততা প্রমাণের জন্যই ক্রিপস মিশন অপরিহার্য ('The Cripps Mission is indispensable to prove our honesty of purpose') ! পটভূমি / কারণ    ক্রিপস্ মিশনের ভারতে আসার পটভূমি বা কারণগুলি হলো –  [1] জাপানি আক্রমণ প্রতিরোধ : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন (১৯৪১ খ্রি., ৭ ডিসেম্বর) জাপান হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের পার্লহারবারে অবস্থিত মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করে অক্ষশক্তির পক্ষে যুদ্ধে যোগদান করলে বিশ্ব রাজনীতিতে এক গুরুতর পরিবর্তন ঘটে। একে একে ফিলিপাইন, ইন্দোচিন, ইন্দোনেশিয়া, মালয় ও ব্রহ্মদেশ বিধ্বস্ত করে (১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৮ মার্চ) জাপান ভারতের নিকটে এসে হাজ...

ম্যানর ব্যবস্থা বলতে কি বোঝ ?

ম্যানর ব্যবস্থা        সামন্ততন্ত্রের ভিতর থেকে তার আবশ্যিক অঙ্গ হিসাবে ম্যানর প্রথার বিকাশ ঘটেছিল। ম্যানর প্রথা প্রকৃতপক্ষে সামন্তযুগের কৃষিভিত্তিক সমাজে একটি অর্থনৈতিক সংগঠন, একে সামন্ততান্ত্রিক উৎপাদন পদ্ধতির গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ম্যানর প্রথা অনেক সময় সিনোরীয় প্রথা নামেও পরিচিত। মূলত সামন্ততন্ত্রে ভূস্বামী কর্তৃক কৃষক শোষণের যে পরিকাঠামো গড়ে উঠেছিল ম্যানর প্রথা ছিল তারই সাংগঠনিক ভিত্তি। সামন্তপ্রভু এবং ম্যানরে বসবাসকারী শ্রমজীবী মানুষের খাদ্যের জোগান আসত ম্যানর থেকে।        ম্যানরের অভ্যন্তরীণ কাঠামো ছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ। একটি ম্যানরের জমিকে দুইভাগে ভাগ করা হত—(1) সামন্তপ্রভুর খাস জমি বা ডিমেইনে, (2) স্বাধীনস্বত্বসম্পন্ন জমি বা ভিলেইন। এই জমির মাধ্যমে কৃষক সামন্তপ্রভুর সঙ্গে একটি অচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ থাকত। সামন্ততন্ত্রের মতো ম্যানর প্রথার উৎস রয়েছে প্রাচীন রোমান ও জার্মানদের স্থানীয় সংগঠনের মধ্যে। ম্যানর প্রথার প্রধান শক্তি ছিল ভূমিদাস। এই ভূমিদাসরা আক্রমণকারী যোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে ভূমিদাসে রূপান্তরিত হয়। ...

খুত ও মুকদ্দম কাদের বলা হত? কে, কেন তাদের কঠোরভাবে দমন করার চেষ্টা করেন ?

খুত ও মুকদ্দম         বাজার দর নিয়ন্ত্রণ এবং জীবন নির্বাহের ব্যয় হ্রাস করেই আলাউদ্দিন খলজি সন্তুষ্ট হতে পারেননি। রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থাকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য তিনি বিভিন্ন ব্যবস্থা অবলম্বন করার জন্য সচেষ্টও হয়ে ওঠেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি রাজস্ব বিভাগের সংস্কারের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে শুরু করেন। রাষ্ট্রের অধীনে খাদ্য ও জমি বৃদ্ধির জন্য তিনি সর্বপ্রথম বিভিন্ন শ্রেণীর অবলম্বন করার জন্য সচেষ্ট হয়ে ওঠেন। তিনি মুসলিম অভিজাত সম্প্রদায় ও ধার্মিক ব্যক্তিদের মিলক্, ইনাম, ইদ্দ্ররাৎ এবং ওয়াকফ জমি রাষ্ট্রের অধীনে পুনরায় আনয়নের চেষ্টা করেন। মুসলিম অভিজাত সম্প্রদায়র ও ধার্মিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পরই সুলতান অলাউদ্দিন খলজি খুত, চৌধুরী ও মুকদ্দম নামে পরিচিত হিন্দু অভিজাতবর্গের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। “খুত” শব্দটির প্রকৃত সংজ্ঞা সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও সম্ভবত পরবর্তীকালে যার জমিদার নামে পরিচিতি লাভ করেন আলাউদ্দিনের-রাজত্বকালে তাঁরা খুত নামে পরিচিত ছিলেন। “চৌধুরী” ছিলেন পরগণার প্রধান ব্যক্তি এবং “মুকদ্দম” ছিলেন গ্রামের প্রধান। রাষ্ট্রের প্...