সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ভারত ছাড়ো আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো।

ভূমিকা : ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক স্বর্ণোজ্জ্বল অধ্যায় হল ভারত ছাড়ো বা আগস্ট আন্দোলন। সিপাহি বিদ্রোহের পর এত বড়ো গণ আন্দোলন ভারতে আর ঘটেনি। গান্ধিজি 'হরিজন' পত্রিকাতে লিখলেন (১৯৪২ খ্রি, ২ এপ্রিল) ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান চাই। ভারতের স্বাধীনতা চাই কেবল ভারতের স্বার্থে নয়—বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য, নাৎসিবাদ, ফ্যাসিবাদ, সমরবাদ, সাম্রাজ্যবাদ এবং এক জাতির ওপর অন্য জাতির আক্রমণের অবসানের জন্য

ভারত ছাড়ো আন্দোলন 

পটভূমি: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিকায় ক্রিপস প্রস্তাবের আগমন ও প্রস্থান, ভারতবাসীর তীব্র স্বাধীনতা- আকাঙ্ক্ষা, মূল্যবৃদ্ধি, জাপানি আক্রমণের ভয়, ব্রিটিশ সেনাদের অত্যাচার সবকিছু মিলেমিশে এক ভবিষ্যৎ গণ আন্দোলনের পটভূমি রচনা করে। গান্ধিজি নিজে এই আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য মরিয়া ছিলেন। তিনি বলেন ভারতকে ঈশ্বরের হাতে সমর্পণ করে ব্রিটিশরা ভারত ছেড়ে চলে যাক। যদি তা না হয় তবে অরাজকতাও শ্রেয়, আপনারা ভারত ছাড়ুন। 

আন্দোলনের সূচনা : বোম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত (১৯৪২ খ্রি., ৮ আগস্ট) নিখিল ভারত কংগ্রেস সমিতির বিপুল ভোটে গান্ধিজির ভারত ছাড়ো প্রস্তাব পাস হয়। ঘোষণা করা হয় ৯ আগস্ট থেকে ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরু হবে এবং ইংরেজ ভারত না ছাড়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে। গান্ধিজি ঘোষণা করেন—পূর্ণ স্বাধীনতা ছাড়া আর কিছুতেই আমি সন্তুষ্ট নই। হয় সিদ্ধিলাভ, নয় মৃত্যু। ভারত স্বাধীন করব, অথবা মৃত্যুবরণ করব— 'Do or Die' (করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে)। নিখিল ভারত কংগ্রেস সমিতির অধিবেশন শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গভীর রাতে গান্ধিজি, জওহরলাল, প্যাটেল, আজাদ ও জে. বি. কৃপালনিসহ শীর্ষনেতাদের ব্রিটিশ গ্রেফতার করে। পরের দিন সকালে এই খবর প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেশজুড়ে হরতাল, বিক্ষোভ, মিছিল ইত্যাদির মাধ্যমে ভারত ছাড়ো বা আগস্ট আন্দোলনের সূচনা ঘটে। 

আন্দোলনের বিস্তার:

  1. বাংলায় : বাংলায় আগস্ট আন্দোলনের মূলকেন্দ্র ছিল কলকাতা, ঢাকা, মেদিনীপুর, হুগলিসহ বিভিন্ন জায়গায়। মেদিনীপুর জেলার তমলুক ও কাঁথি মহকুমায় এই আন্দোলন সবথেকে তীব্র আকার ধারণ করে। 
  2. বিহার ও যুক্তপ্রদেশে: বিহারের মুঙ্গের, ভাগলপুর, মুজাফ্ফরপুর, পূর্ণিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে, যুক্তপ্রদেশের বালিয়া, আজমগড়, সুলতানপুর, জৌনপুর, গোরক্ষপুর প্রভৃতি জেলায় গান্ধিজির 'করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে' ধ্বনি জনগণকে স্বাধীনতালাভে ব্যাকুল করে। 
  3. অন্যান্য অঞ্চলে: বোম্বাই, আমেদাবাদ, পুনা, নাগপুর, কানপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। বেনারস, পাটনা, কটক প্রভৃতি স্থানে আন্দোলনকারীরা যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। রাজস্থানের যোধপুর, উদয়পুর, জয়পুরে সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়। পাঞ্জাব, সিন্ধু ও সীমান্ত প্রদেশে আন্দোলনকারীরা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে।

জাতীয় সরকার গঠন : ভারত ছাড়ো আন্দোলনকালে ভারতের বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু জাতীয় সরকার গড়ে ওঠে। মেদিনীপুরের তমলুক, দিনাজপুরের বালুরঘাট, ওড়িশার তালচের, মধ্যপ্রদেশের ভাগলপুর, মহারাষ্ট্রের সাতার, আসামের নওগাঁও, উত্তর প্রদেশের বালিয়া প্রভৃতি স্থানে জাতীয় সরকার গড়ে ওঠে। তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার' কার্যকর ছিল ১৯৪২ খ্রি. ১৭ ডিসেম্বর থেকে ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ৮ আগস্ট পর্যন্ত।

নেতৃবৃন্দ : ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যাঁরা দক্ষতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে জয়প্রকাশ নারায়ণ, অরুণা আসফ আলি, সুচেতা কৃপালনি, রামমনোহর লোহিয়া, অচ্যুৎ পট্টবর্ধন, অজয় মুখার্জি, যোগেশ চ্যাটার্জি, সুশীল ধাড়া, সরষু পাণ্ডে, নানা পাতিল এবং আসামের ১৩ বছরে স্কুলছাত্রী কনকলতা বড়ুয়া ও মেদিনীপুরের তমলুকের ৭০ বছরের বৃদ্ধা মাতঙ্গিনি হাজরা ছিলেন উল্লেখযোগ্য।

ব্রিটিশের দমননীতি: ব্রিটিশ সরকার তীব্র দমননীতির সাহায্যে আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা শুরু করে। নিরস্ত্র অসহায় জনতার ওপর মাত্র দুদিনে পুলিশ ৪৭ বার গুলি চালায়। সরকারি মতে, ভারত ছাড়ো আন্দোলনে পুলিশ ৬০১ বার গুলি চালিয়ে ৭৬৩ জনকে হত্যা করে ও ১৯১১ জনকে আহত করে। এমনকি বহু জায়গায় বিমান থেকে মেশিনগানের সাহায্যেও গুলি চালানো হয়। ড. বিপান চন্দ্ৰ 'মডার্ন ইন্ডিয়া' গ্রন্থে বলেছেন— ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের পর সরকারি দমননীতির এমন নিষ্ঠুর ও ব্যাপক প্রকাশ আর কখনও দেখা যায়নি ("India had not witnessed such intense repression since the revolt of 1857)।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রকৃতি

আন্দোলন অহিংস পথে শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত তা হিংসাত্মক হয়ে ওঠে। 

  1. পুনায় অনুষ্ঠিত কংগ্রেস কার্যকরী সমিতির অধিবেশনে স্বীকার করা হয় যে বহু স্থানেই জনতা কংগ্রেসের অহিংস নীতি থেকে সরে গিয়েছিল। 
  2. ম্যাক্স হার্কোটের মতে, ভারত ছাড়ো আন্দোলন ছিল মূলত কৃষক বিদ্রোহ, জাতীয় বিদ্রোহ নয়। স্টিফেন হেনিংহ্যাম বলেছেন, কৃষকরা এই বিদ্রোহে যোগ দিয়েছিল পুলিশি অত্যাচার এবং উচ্চবর্ণের লোকদের প্ররোচনায়। 
  3. আবার জওহরলাল নেহরু বলেছেন শ্রমিকসহ সমাজের সব অংশই এই আন্দোলনে সক্রিয় ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দিয়েছিল, তাই এটি ছিল গণ আন্দোলন (It was essentially spontaneous mass upheaval....) ।

ভারত ছাড়ো আন্দোলন ব্যর্থতার কারণ 

ভারত ছাড়ো আন্দোলন ব্যর্থতার জন্য বিভিন্ন কারণ দায়ী ছিল। যেমন—

  1. নেতৃত্বের অভাব : নেতৃত্বের অভাবে ভারত ছাড়ো আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছিল বলে মনে করা হয়। গান্ধিজিসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দ কারারুদ্ধ থাকায় এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো উপযুক্ত নেতা ছিল না।
  2. ঐক্যের অভাব: মুসলিম লিগ, কমিউনিস্ট পার্টি, হিন্দুমহাসভা, কেউই আন্দোলন সফল করার জন্য কংগ্রেসকে সমর্থন করেনি। এই দলগত ঐক্যের অভাব আন্দোলনকে ব্যর্থ করে।
  3. ব্রিটিশের পীড়ন নীতি : ব্রিটিশের তীব্র দমননীতি আন্দোলনকে সফল হতে দেয়নি। দৈহিক নির্যাতন, গ্রেফতার, ঘর পুড়িয়ে দেওয়া, ধর্ষণ, এমনকি গুলি চালিয়ে ব্রিটিশ সরকার এই আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দেয়।
  4. অসময়ে সূচনা: ভুল সময়ে এই আন্দোলন শুরু হওয়ায় আন্দোলন সফল হয়নি বলে মনে করা হয়। কারণ যে সময় আন্দোলন শুরু করা হয় তখন বিশ্বযুদ্ধ পরিস্থিতি মিত্রপক্ষের অনুকূলে আসতে শুরু করে। সুভাষচন্দ্র বসু ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি থাকাকালীন এই আন্দোলনের সূচনা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু গান্ধি অনুগামীরা তখন তা অনুমোদন করেননি।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের গুরুত্ব

ভারত ছাড়ো আন্দোলন সফল না হলেও এর গুরুত্ব অপরিসীম— 

  1. ব্রিটিশের বোধোদয়: এই আন্দোলনের পরেই ব্রিটিশ স্পষ্টরূপে বুঝে নেয় যে, ভারতে তাদের দিন শেষ হয়ে এসেছে। 
  2. কংগ্রেসের মর্যাদা বৃদ্ধিতে: এই আন্দোলনের পর কংগ্রেসের মর্যাদা ও প্রভাব বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। 
  3. জাতীয় জাগরণে: ১৯৪২-এর আন্দোলন যেভাবে জাতীয় জাগরণ ঘটিয়েছিল ইতিপূর্বে তা আর দেখা যায়নি।
  4. সাম্প্রদায়িক ঐক্য : এই আন্দোলন সাম্প্রদায়িক ঐক্যকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করে।

উপসংহার : ভারত ছাড়ো আন্দোলন সত্যিই ভারতবাসীর স্বাধীনতার পথকে সুগম করেছিল। জওহরলাল নেহরু এই আন্দোলনের মূল্যায়ন প্রসঙ্গে বলেছেন— নেতা নেই, সংগঠন নেই, উদ্যোগ আয়োজন নেই, কোনো মন্ত্ৰবল নেই, অথচ একটা অসহায় জাতি স্বতঃস্ফূর্তভাবে কর্মপ্রচেষ্টার আর কোনো পন্থা না পেয়ে বিদ্রোহী হয়ে উঠল—এ দৃশ সত্যই বিস্ময়ের ব্যাপার। ভারতবাসী যে স্বাধীনতা পাচ্ছেই, তা বোঝা যায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিলকে লেখা বড়োলটি ওয়াভেলের এক উক্তি থেকে — ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দিন শেষ হয়েছে। ...আয়ার্ল্যান্ডে ও মিশরে যেভাবে ব্রিটিশ ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে, ভারতে এখনই তা করা দরকার।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ক্রিপস মিশন কেন ভারতে এসেছিল ? ক্রিপস মিশনের প্রস্তাব‌ গুলি কী ছিল ? এক্ষেত্রে ভারতীয়দের কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল ?

সূচনা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ভারতের ব্রিটিশ সরকার ভারতবাসীর আর্থিক ও সামরিক সাহায্য প্রার্থনা করে। যদিও কংগ্রেস এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়, ফলে এক রাজনৈতিক অচলাবস্থা দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ মন্ত্রীসভার সদস্য স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপসের নেতৃত্বে ক্রিপস মিশন ভারতে আসে (১৯৪২ খ্রি.) ও এক প্রস্তাব পেশ করে যা ক্রিপস প্রস্তাব নামে পরিচিত। ক্রিপস্ প্রস্তাব সম্পর্কে ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল বলেছিলেন—আমাদের সততা প্রমাণের জন্যই ক্রিপস মিশন অপরিহার্য ('The Cripps Mission is indispensable to prove our honesty of purpose') ! পটভূমি / কারণ    ক্রিপস্ মিশনের ভারতে আসার পটভূমি বা কারণগুলি হলো –  [1] জাপানি আক্রমণ প্রতিরোধ : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন (১৯৪১ খ্রি., ৭ ডিসেম্বর) জাপান হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের পার্লহারবারে অবস্থিত মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করে অক্ষশক্তির পক্ষে যুদ্ধে যোগদান করলে বিশ্ব রাজনীতিতে এক গুরুতর পরিবর্তন ঘটে। একে একে ফিলিপাইন, ইন্দোচিন, ইন্দোনেশিয়া, মালয় ও ব্রহ্মদেশ বিধ্বস্ত করে (১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৮ মার্চ) জাপান ভারতের নিকটে এসে হাজ...

ম্যানর ব্যবস্থা বলতে কি বোঝ ?

ম্যানর ব্যবস্থা        সামন্ততন্ত্রের ভিতর থেকে তার আবশ্যিক অঙ্গ হিসাবে ম্যানর প্রথার বিকাশ ঘটেছিল। ম্যানর প্রথা প্রকৃতপক্ষে সামন্তযুগের কৃষিভিত্তিক সমাজে একটি অর্থনৈতিক সংগঠন, একে সামন্ততান্ত্রিক উৎপাদন পদ্ধতির গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ম্যানর প্রথা অনেক সময় সিনোরীয় প্রথা নামেও পরিচিত। মূলত সামন্ততন্ত্রে ভূস্বামী কর্তৃক কৃষক শোষণের যে পরিকাঠামো গড়ে উঠেছিল ম্যানর প্রথা ছিল তারই সাংগঠনিক ভিত্তি। সামন্তপ্রভু এবং ম্যানরে বসবাসকারী শ্রমজীবী মানুষের খাদ্যের জোগান আসত ম্যানর থেকে।        ম্যানরের অভ্যন্তরীণ কাঠামো ছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ। একটি ম্যানরের জমিকে দুইভাগে ভাগ করা হত—(1) সামন্তপ্রভুর খাস জমি বা ডিমেইনে, (2) স্বাধীনস্বত্বসম্পন্ন জমি বা ভিলেইন। এই জমির মাধ্যমে কৃষক সামন্তপ্রভুর সঙ্গে একটি অচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ থাকত। সামন্ততন্ত্রের মতো ম্যানর প্রথার উৎস রয়েছে প্রাচীন রোমান ও জার্মানদের স্থানীয় সংগঠনের মধ্যে। ম্যানর প্রথার প্রধান শক্তি ছিল ভূমিদাস। এই ভূমিদাসরা আক্রমণকারী যোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে ভূমিদাসে রূপান্তরিত হয়। ...

মার্কেন্টাইল বাদ কি ? এর বৈশিষ্ট্য গুলি কি কি ?

মার্কেন্টাইলবাদ মার্কেন্টাইল বিখ্যাত ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ অ্যাডম স্মিথ তার লেখা বিখ্যাত গ্রন্থ “ওয়েল্থ্ অব নেশনস' (Wealth of Nations)- এ ‘মার্কেন্টাইলবাদ' (Mercantilism) কথাটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন। মার্কেন্টাইলবাদীদের ধারণায় পৃথিবীতে সম্পদের পরিমাণ সীমিত। এই মতবাদের মূল কথা হল সংরক্ষণবাদী অর্থনীতি অনুযায়ী বলা হয় এই মতবাদ মেনে বিদেশি পণ্য আমদানি কমানোর জন্য আমদানি শুল্ক বাড়ানো হত। এই মতবাদের মূল লক্ষ্য হল দেশ স্বনির্ভর ও সমৃদ্ধশালী করে তোলার জন্য নিজ দেশের সোনা রুপোর মতো মূল্যবান ধাতুর সঞ্চয় বাড়ানো। মূল বক্তব্যসমূহ বা বৈশিষ্ট্যসমূহ আর্থিক জাতীয়তাবাদ: ষোলো থেকে আঠারো শতকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি রাষ্ট্রের অধীনে আসে। অর্থাৎ রাষ্ট্র অর্থনীতির মূল নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠে। বণিকদের স্বার্থে গড়ে ওঠা গিল্ডগুলির বদলে রাষ্ট্র বণিক ও বাণিজ্য বিষয়গুলির দেখাশোনা শুরু করে। রাষ্ট্রের স্বার্থের সঙ্গে বণিক ও উৎপাদকের স্বার্থকে এক দৃষ্টিতে দেখা শুরু হয়। ফলে জাতীয়তাবাদী স্বার্থরক্ষার উদ্দেশ্যে অর্থনীতি পরিচালিত হতে শুধু করে, যার নাম হয় অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ। মূল্যবান ধাতুর ওপর গু...