সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কার্লসবার্ড ডিক্রি কি

কার্লসবার্ড ডিক্রি 



অস্ট্রিয়ার রক্ষণশীল প্রধানমন্ত্রী মেটারনিকের জার্মানী সম্পর্কে অত্যন্ত কঠোর নীতির মূল কথা ছিল জার্মানীর প্রত্যেকটি রাষ্ট্রের স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করা, জার্মানীকে দুর্বল ও খণ্ডিত রেখে জার্মানীর ঐক্যবন্ধনের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করা। ইউরোপে মুক্তি সংগ্রামের সময় জার্মানদের জাতীয়তাবাদী মনোভাব যেরূপ উদ্দীপ্ত হয়ে উঠেছিল, ভিয়েনা বন্দোবস্ত তা চরিতার্থ করতে পারেনি। সুতরাং তাদের জাতীয়তাবাদী আশা-আকাঙক্ষা অপরিতৃপ্ত হয়ে যায়। জার্মানীর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছিল অসন্তোষের মূলকেন্দ্র। অধ্যাপকদের সহায়তায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রগণ বার্চেনস্যাফট (Burchenchaft) গড়ে জাতীয়তাবাদী ও গণতান্ত্রিক আদর্শ প্রচার করে যেতে শুরু করে। লিপজিগ-এর যুদ্ধের স্মৃতি উদ্যাপন করার জন্য ছাত্রগণ ওয়ার্টবার্গ (Wartburg) উৎসবের আয়োজন করে ও মেটারনিকের কুশপুত্তলিকা দাহ করে। কিছুদিনের মধ্যেই রাশিয়ার গুপ্তচর সন্দেহে কট্‌জেবু (Kotzebu) নামে এক সাংবাদিককে হত্যা করা হয়। মেটারনিক এইসব ঘটনাকে বিপ্লবী কার্যকলাপ মনে করে প্রাশিয়ার রাজা তৃতীয় ফ্রেডারিক ও জার্মানীর অন্যান্য রাজন্যবর্গকে সতর্ক করে দেন। মেটারনিক রাশিয়ার জার প্রথম আলেকজান্ডার ও প্রাশিয়ারাজ তৃতীয় ফ্রেডারিক উইলিয়ামকে সকল প্রকার উদারনীতি থেকে সতর্ক করে দেন এবং পবিত্র চুক্তি (Holy Alliance)-কে দমনমূলক যন্ত্রে রূপান্তরিত করার পরামর্শ দেন। মেটারনিক কার্লসবাড নগরে জার্মানীর নৃপতিদের একাধিক বৈঠক আহ্বান করেন এবং এই বৈঠকগুলোতে জার্মানীতে প্রতিক্রিয়াশীল নীতির সাময়িক সাফল্যের সূচনা হয়। কার্লসবাড বৈঠকে যে সকল বিধি-ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, তার ফলে জার্মান কনফেডারেশনের ওপর মেটারনিকের প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। কার্লসবার্ড বৈঠকে গৃহীত বিধিগুলো জার্মানীর 'ডীট' (Diet) বা সংসদে নিয়মবহির্ভূত উপায়ে ও ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে পাশ করা হয় এবং সেগুলো জার্মানীর সকল রাষ্ট্রের পক্ষে কার্যকর করা বাধ্যতামূলক করা হয়। এরপরে মেটারনিক ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে কার্লসবাড নগরে জার্মান রাজন্যবর্গের এক সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাব অনুসারে কার্লসবাড ডিক্রি বা কার্লসবাড বিধান জারী করেন। জার্মানীর গণতান্ত্রিক ঐক্যবদ্ধতার আন্দোলন দমন করার উদ্দেশ্যেই এই ঘোষণা জারী করা হয়েছিল। এই বিধান অনুসারে জার্মানীর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংগঠন নিষিদ্ধ করা হয়; বহু উদারপন্থী ছাত্রকে কারারুদ্ধ করা হয়; অধ্যাপক ও ছাত্রদের সম্বন্ধে অবহিত থাকার জন পরিদর্শক নিযুক্ত করা হয়। সংবাদপত্রগুলোর স্বাধীনতা হরণ করা হয়। কার্লসবাড নির্দেশনাম জার্মানীতে মেটারনিকের প্রাধান্য স্থাপন ও তাঁর প্রতিক্রিয়াশীল নীতির সাফল্যের পরিচায়ক। মেটারনিকের পরামর্শেই প্রাশিয়ার রাজা তৃতীয় ফ্রেডারিক উইলিয়াম শাসনতান্ত্রিক সংস্কার সম্পর্কে প্রজাগণকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন শেষ পর্যন্ত তা প্রত্যাহার করেন। ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লবের পর প্রধানত মেটারনিকের উদ্যোগেই ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দে জার্মানীর গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমন করার জন্য রাশিয়া, প্রাশিয়া ও অস্ট্রিয়ার মধ্যে একটি সংঘ স্থাপিত হয়।


📖আরও পড়ুন

1. ফরাসী বিপ্লবে রুশোর অবদান কি ছিল


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ক্রিপস মিশন কেন ভারতে এসেছিল ? ক্রিপস মিশনের প্রস্তাব‌ গুলি কী ছিল ? এক্ষেত্রে ভারতীয়দের কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল ?

সূচনা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ভারতের ব্রিটিশ সরকার ভারতবাসীর আর্থিক ও সামরিক সাহায্য প্রার্থনা করে। যদিও কংগ্রেস এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়, ফলে এক রাজনৈতিক অচলাবস্থা দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ মন্ত্রীসভার সদস্য স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপসের নেতৃত্বে ক্রিপস মিশন ভারতে আসে (১৯৪২ খ্রি.) ও এক প্রস্তাব পেশ করে যা ক্রিপস প্রস্তাব নামে পরিচিত। ক্রিপস্ প্রস্তাব সম্পর্কে ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল বলেছিলেন—আমাদের সততা প্রমাণের জন্যই ক্রিপস মিশন অপরিহার্য ('The Cripps Mission is indispensable to prove our honesty of purpose') ! পটভূমি / কারণ    ক্রিপস্ মিশনের ভারতে আসার পটভূমি বা কারণগুলি হলো –  [1] জাপানি আক্রমণ প্রতিরোধ : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন (১৯৪১ খ্রি., ৭ ডিসেম্বর) জাপান হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের পার্লহারবারে অবস্থিত মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করে অক্ষশক্তির পক্ষে যুদ্ধে যোগদান করলে বিশ্ব রাজনীতিতে এক গুরুতর পরিবর্তন ঘটে। একে একে ফিলিপাইন, ইন্দোচিন, ইন্দোনেশিয়া, মালয় ও ব্রহ্মদেশ বিধ্বস্ত করে (১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৮ মার্চ) জাপান ভারতের নিকটে এসে হাজ...

ম্যানর ব্যবস্থা বলতে কি বোঝ ?

ম্যানর ব্যবস্থা        সামন্ততন্ত্রের ভিতর থেকে তার আবশ্যিক অঙ্গ হিসাবে ম্যানর প্রথার বিকাশ ঘটেছিল। ম্যানর প্রথা প্রকৃতপক্ষে সামন্তযুগের কৃষিভিত্তিক সমাজে একটি অর্থনৈতিক সংগঠন, একে সামন্ততান্ত্রিক উৎপাদন পদ্ধতির গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ম্যানর প্রথা অনেক সময় সিনোরীয় প্রথা নামেও পরিচিত। মূলত সামন্ততন্ত্রে ভূস্বামী কর্তৃক কৃষক শোষণের যে পরিকাঠামো গড়ে উঠেছিল ম্যানর প্রথা ছিল তারই সাংগঠনিক ভিত্তি। সামন্তপ্রভু এবং ম্যানরে বসবাসকারী শ্রমজীবী মানুষের খাদ্যের জোগান আসত ম্যানর থেকে।        ম্যানরের অভ্যন্তরীণ কাঠামো ছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ। একটি ম্যানরের জমিকে দুইভাগে ভাগ করা হত—(1) সামন্তপ্রভুর খাস জমি বা ডিমেইনে, (2) স্বাধীনস্বত্বসম্পন্ন জমি বা ভিলেইন। এই জমির মাধ্যমে কৃষক সামন্তপ্রভুর সঙ্গে একটি অচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ থাকত। সামন্ততন্ত্রের মতো ম্যানর প্রথার উৎস রয়েছে প্রাচীন রোমান ও জার্মানদের স্থানীয় সংগঠনের মধ্যে। ম্যানর প্রথার প্রধান শক্তি ছিল ভূমিদাস। এই ভূমিদাসরা আক্রমণকারী যোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে ভূমিদাসে রূপান্তরিত হয়। ...

খুত ও মুকদ্দম কাদের বলা হত? কে, কেন তাদের কঠোরভাবে দমন করার চেষ্টা করেন ?

খুত ও মুকদ্দম         বাজার দর নিয়ন্ত্রণ এবং জীবন নির্বাহের ব্যয় হ্রাস করেই আলাউদ্দিন খলজি সন্তুষ্ট হতে পারেননি। রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থাকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য তিনি বিভিন্ন ব্যবস্থা অবলম্বন করার জন্য সচেষ্টও হয়ে ওঠেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি রাজস্ব বিভাগের সংস্কারের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে শুরু করেন। রাষ্ট্রের অধীনে খাদ্য ও জমি বৃদ্ধির জন্য তিনি সর্বপ্রথম বিভিন্ন শ্রেণীর অবলম্বন করার জন্য সচেষ্ট হয়ে ওঠেন। তিনি মুসলিম অভিজাত সম্প্রদায় ও ধার্মিক ব্যক্তিদের মিলক্, ইনাম, ইদ্দ্ররাৎ এবং ওয়াকফ জমি রাষ্ট্রের অধীনে পুনরায় আনয়নের চেষ্টা করেন। মুসলিম অভিজাত সম্প্রদায়র ও ধার্মিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পরই সুলতান অলাউদ্দিন খলজি খুত, চৌধুরী ও মুকদ্দম নামে পরিচিত হিন্দু অভিজাতবর্গের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। “খুত” শব্দটির প্রকৃত সংজ্ঞা সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও সম্ভবত পরবর্তীকালে যার জমিদার নামে পরিচিতি লাভ করেন আলাউদ্দিনের-রাজত্বকালে তাঁরা খুত নামে পরিচিত ছিলেন। “চৌধুরী” ছিলেন পরগণার প্রধান ব্যক্তি এবং “মুকদ্দম” ছিলেন গ্রামের প্রধান। রাষ্ট্রের প্...