ইংল্যান্ডের ইতিহাসে এগারো বছরের স্বৈরাচারিতা কাকে বলে ?

ইংল্যান্ডের ইতিহাসে এগারো বছরের স্বৈরাচারিতা

ইংল্যান্ডের ইতিহাসে এগারো বছরের স্বৈরাচারিতা কাকে বলে ?


      রাজত্বের প্রথম চার বছরে (১৬২৫-১৬২৯ খ্রিস্টাব্দ) স্টুয়ার্ট বংশীয় রাজা প্রথম চার্লস চারবার পার্লামেন্ট আহ্বান করেন এবং প্রতিবারই তিনি পার্লামেন্টের সঙ্গে বিরোধে লিপ্ত হন। তারপর দীর্ঘ এগারো বছর তিনি পার্লামেন্ট আহ্বান না করেই শাসনকার্য পরিচালনা করেন। পার্লিয়ামেন্টের সঙ্গে তাঁর বিরোধের মূল কারণ ছিল সার্বভৌমত্ব ও শাসনকার্যের দায়িত্বের প্রশ্ন। ন্যায়ভাবেই হোক আর অন্যায়ভাবেই হোক পার্লিয়ামেন্ট শাসনকার্যের উপর অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা দাবি করে। অপরদিকে রাজা চার্লসও ন্যায়ভাবেই হোক আর অন্যায়ভাবেই হোক পার্লিয়ামেন্টের এই দাবি অগ্রাহ্য করার চেষ্টা করেন। ফলে উভয়পক্ষের মধ্যে বিরোধ অনিবার্য হয়ে ওঠে। এই বিরোধ এড়াবার জন্য চার্লস পার্লিয়ামেন্ট আহ্বান না করেই শাসনকার্য পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেন। এর ফলে ১৬২১ থেকে ১৬৪০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত পার্লিয়ামেন্টের কোন অধিবেশন বসেনি। ইংল্যান্ডে পার্লিয়ামেন্ট প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর কোনকালেই এত দীর্ঘদিন পার্লিয়ামেন্ট আহ্বান না করে শাসনকার্য পরিচালিত হয়নি। সেজন্য এই এগারো বছর পার্লিয়ামেন্টের কোন অধিবেশন ছাড়াই পরিচালিত শাসন ব্যবস্থাকে ‘এগারো বছরের স্বৈরচারিতা’ বলা হয়। তবে এই প্রসঙ্গে মনে রাখা প্রয়োজন যে সে আমলে প্রতি বছর পার্লিয়ামেন্ট ডাকার কোন বাধ্যবাধকতা ছিল না। রানী এলিজাবেথের রাজত্বকালে সাধারণত তিন বছরে একবার করে পার্লিয়ামেন্টের অধিবেশন বসত। তাছাড়া চার্লস নির্মম অত্যাচারী স্বৈরাচারী শাসক ছিলেন না এবং প্রজাদের জীবন, সম্পত্তি বা অধিকারও তিনি ধবংস করার চেষ্টা করেননি। বরং এই সময় ইংল্যান্ডের সমৃদ্ধি যথেষ্ট বৃদ্ধি পায় এবং একমাত্র ইলিয়ট ছাড়া রাষ্ট্রদ্রোহিতার দায়ে আর কোন ব্যক্তিকে প্রাণদণ্ডও দেয়া হয়নি। রাজা প্রথম চার্লস সাধারণত বিচারকদের পরামর্শ অনুযায়ী আইন প্রয়োগ করে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। কিন্তু বিচারকদের পরামর্শ সব সময় যে নিরপেক্ষ হত তা বলা যায় না। তবে এই সময় রাজা শাসনকার্য বিষয়ে প্রথম চার্লসের দুজন প্রধান পরামর্শদাতা ছিলেন দুজন-টমাস ওয়েন্টওয়ার্থ (আর্ল অফ স্ট্যাফোর্ড) এবং উইলিয়াম লাউড। দক্ষ শাসক হিসাবে এই দুজনের যথেষ্ট সুনাম ছিল এবং টমাস ওয়েন্টওয়ার্থ সাধারণ প্রশাসনিক বিষয়গুলো ও উইলিয়াম লাউড ধর্মীয় বিষয়গুলো পরিচালনা করতেন। তবে ইংল্যান্ডের জনসাধারণ এই শাসনব্যবস্থা পছন্দ করেনি এবং ভবিষ্যতে যাতে এইরূপ আর পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য তারা উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চেষ্টা শুরু করে। বিশেষত রাজকোষের অর্থাভাব দূর করার উদ্দেশ্যে এবং বারবারি জলদস্যুদের আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য প্রথম চার্লস পুরাতন জাহাজ মেরামত ও নতুন জাহাজ নির্মাণের জন্য ১৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের উপকূলবর্তী অঞ্চলের অধিবাসীদের উপর ‘শিপ মানি’ (Ship Money) নামে কর ধার্য করলে ইংল্যান্ডের জনসাধারণের বিক্ষোভ প্রবল আকার ধারণ করে। ইতিমধ্যে ধর্ম সংক্রান্ত ব্যাপারে চার্লসের নীতি স্কটল্যান্ডের অধিবাসীদের সঙ্গে রাজার সম্পর্ক অত্যন্ত তিক্ত হয়ে ওঠে। বিশপের যুদ্ধ (Bishop's War) নামে পরিচিত যুদ্ধ স্কটল্যান্ডে শুরু হলে (১৫৩৯ ও ১৬৪০ খ্রিস্টাব্দ) অর্থাভাবে জর্জরিত প্রথম চার্লস ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দে পার্লিয়ামেন্ট ডাঁকতে বাধ্য হলে ‘এগারো বছরের স্বেচ্ছাচারিতা’র অবসান ঘটে


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন