আধুনিক বিজ্ঞানে কেপলারের অবদান
জোহানেস কেপলার (১৫৭১-১৬৩০ খ্রিস্টাব্দ) জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একাধারে গণিতজ্ঞ, পদার্থবিজ্ঞানী এবং জ্যোতির্বিদ, তবে জ্যোতির্বিজ্ঞানে গ্রহের গতি সম্বন্ধীয় সূত্রাবলীর আবিষ্কার হিসাবেই বিশেষভাবে পরিচিত। টুবিংগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময়ই তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞানে বিশেষত কোপারনিকাসের সূর্যকেন্দ্রিক তত্ত্বের প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট হন। কর্মজীবনের প্রারম্ভে প্রাগে এসে টাইকো ব্রাহের সহকারীরূপে জ্যোতির্বিজ্ঞানে মনোনিবেশ করেন। টাইকো ব্রাহের অকালমৃত্যুর পর তাঁর দীর্ঘকাল যাবৎ গবেষণালব্ধ তথ্যাবলী হাতে পেয়েই সেগুলোর যথাযথ ব্যবহার করার জন্য সচেষ্ট হন। এর পরেই কেপলার গ্রহদের উৎকেন্দ্রিক কক্ষপথের আকৃতি ও প্রকৃতি নির্ণয়ে যত্নবান হন। গ্রহের গতি সম্বন্ধীয় প্রথম নিয়মটি হল: “প্রতিটি গ্রহ সূর্যের চারদিকে এক-একটি উপাবৃত্তাকার পথে ঘোরে এবং সূর্য এই সব উপবৃত্তের একটি নাভিবিন্দুতে অবস্থিত।” কয়েকবছর পরে তাঁর দ্বিতীয় নিয়মটি আবিষ্কৃত হল: “সূর্য এবং গ্রহের সংযোগকারী সরলরেখা সমান সময়ে উপবৃত্তাকার ক্ষেত্রের সমান অংশ অঙ্কিত করে।” এই সূত্র দুটি এবং গ্রহদের গতি, ঔজ্জ্বল্য ও অবস্থান সম্বন্ধে আরও বহু তথ্য ১৬০৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁর ‘অ্যাস্ট্রোনোমিয়া নোভা’ গ্রন্থে প্রকাশিত হয়। এর প্রায় একদশক পরে গ্রহের গতি-সম্বন্ধীয় তাঁর তৃতীয় নিয়মটি আবিষ্কার করেন। এই সব তথ্য ১৬১৯ খ্রিস্টাব্দে প্রণীত তাঁর “দ্য হারমোনিয়াস মুণ্ডি” (De Hamonius Mundi) গ্রন্থে বর্ণিত হয়। উপরি-উক্ত গ্রন্থগুলোতে গ্রহের গতি অবস্থান ইত্যাদি তথ্যের আলোচনা ছাড়াও সমগ্র বিশ্ববিধানের পশ্চাতে এক ঐক্যসূত্রের অস্তিত্ব এবং গ্রহ নক্ষত্রাদির সঙ্গে ব্যক্তির সম্পর্ক নিয়ে কেপলারের বহুবিধ মৌলিক চিন্তাভাবনার নিদর্শন পাওয়া যায়। ১৬০৪ খ্রিস্টাব্দে আকাশে যে সুপার নোভা-র আবির্ভাব হয় তা এখন ‘কেপলারের নোভা’ নামে পরিচিত। ১৬০৬ খ্রিস্টাব্দে তাঁর রচিত ‘ডে স্টেলানোভা’ গ্রন্থে এই সুপার নোভা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় সকল তথ্য আলোচিত হয় এই একই সময় কেপলার আলোর ধর্ম নিয়ে বহু চিন্তাভাবনা করে ১৬০৪ খ্রিস্টাব্দের অ্যাস্ট্রোনমিয়ি পারস অপটিকা (Astronomiae Pars Optica) এবং ১৬১১ খ্রিস্টাব্দে ‘ডায়োপট্রিস’ (Diopotrice) নামক গ্রন্থ দুটি রচনা করেন। শেষোক্ত গ্রন্থে তিনি আলোর ধর্মকে কাজে লাগিয়ে দূরবীক্ষণ যন্ত্রের উন্নতিসাধনের প্রস্তাব করেন। আলোর প্রতিসরণ ও দৃষ্টির ধর্ম সম্পর্কে এই দুটি গ্রন্থে বহু তথ্য আলোচিত হয়। কেপলারের সর্বশেষ উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ছিল ‘ট্যবুলি রুডোলফিনি’ (Tabule Rudolphinae)। ১৬২৭ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত এই গ্রন্থে গ্রহগুলোর অবস্থান, ঔজ্জ্বল্য ও গতি বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা করা হয়েছে। টাইকো ব্রাহের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা এই গ্রন্থ জ্যোতির্বিজ্ঞানের একটি কীর্তিস্তম্ভ।