সিংহাসনে আরোহণ করার পর হুমায়ুনকে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল ?

সিংহাসনে আরোহণ করার পর হুমায়ুনের সমস্যা 

   মুঘল সম্রাট বাবরের মৃত্যুর চারদিন পর অর্থাৎ ১৫৩০ খ্রিস্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বর তাঁর জেষ্ঠপুত্র হুমায়ুন দিল্লীর সিংহাসনে বসেন।  ‘হুমায়ুন’ শব্দের অর্থ ‘ভাগ্যবান’। কিন্তু ভাগ্যের নিমর্ম পরিহাসে হুমায়ুনের সমগ্র জীবনটাই নানাবিধ সমস্যায় দুর্ভাগ্যপূর্ণ ছিল। তিনি ১৫০৮ খ্রিস্টাব্দে ৬ই মার্চ কাবুলে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মাতা ছিলেন মহিম বেগম। পিতা বাবর মৃত্যুশয্যায় হুমায়ূনকে সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী মনোনীত করে যান।


সিংহাসনে আরোহণ করার পর হুমায়ুনকে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল


হুমায়ুনের সমস্যাসমূহঃ সিংহাসনে বসেই হুমানয়ুন নানাবিধ কঠিন ও জটিল সমস্যার সম্মুখীন হন। কেননা পিতা বাবরের কাছ থেকে তিনি যে সিংহাসন লাভ করেছিলেন, তা নিষ্কণ্টক ছিল না। প্রথমত: জ্যেষ্ঠ পুত্র সিংহাসনের অধিকারী হবেন এমন রীতি-তৈমুর বংশে প্রচলিত ছিল না। তাঁর অন্যান্য ভ্রাতা ও আত্মীয়রা সিংহাসনের উপর তাঁদের দাবী জানাতে থাকে। ফলে সিংহাসন দিয়ে জটিল বিরোধ দেখা দেয়। দ্বিতীয়তঃ বাবরের ভ্রান্ত অর্থনীতি, ক্রমাগত যুদ্ধ বিগ্রহ ও অমিতব্যয়িতার জন্য রাজকোষ শূন্য ছিল। ফলে হুমায়ুন প্রবল অর্থসংকটে ছিলেন। তৃতীয়তঃ, হুমায়ুনের চরিত্রে সারল্য, কৃতজ্ঞতাবোধ ছিল, কিন্তু তিনি দক্ষ রাজনীতিবিদ ছিলেন না। রাজনীতির ক্ষেত্রে তাঁর অদূরদর্শিতা তার বিপর্যয় ডেকে এনেছিল। চতুর্থতঃ বাবর স্বল্প সময়ে মুঘল সাম্রাজ্যের সংহতিসাধন করে যেতে পারেন নি। হুমায়ুন উত্তরাধিকার সুত্রে যে সাম্রাজ্য লাভ করেছিলেন তা ছিল নানা জটিল সমস্যার পরিপূর্ণ। এর সমাধান একমাত্র দক্ষ ও দূরদর্শী শাসকই করতে পারতেন, কিন্তু হুমায়ুনের সেই দূরদর্শিতা, বিচক্ষণতা ও ধৈর্য ছিল না। পঞ্চমতঃ বাবরের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সাম্রাজ্যের নানাস্থানে বিদ্রোহ দেখা দেয় জায়গীর ও আমীর রাও হুমায়ুনের কর্তৃত্ব অস্বীকার করেন। ষষ্ঠতঃ হুমায়ুনের ক্ষুদ্র সেনাবাহিনী নিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য রক্ষা সহজ বিষয় ছিল না। সপ্তমতঃ বাবরের মৃত্যুর পর মুঘল সেনা ও সর্দারদের মধ্যে ভাঙন দেখা দেয়। বাবরের সেনাদল নানা জাতির সমন্বয়ে গঠিত ছিল। বাবর ব্যক্তিগত দক্ষতায় সেনাদলকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন, কিন্তু হুমায়ুনের নেতৃত্বদানের সেই ক্ষমতা ছিল না। অষ্টমত: হুমায়ুনের ভ্রাতৃবিরোধ, বিশেষ করে কামরান এর বিরোধিতা ও ষড়যন্ত্র হুমায়ূনকে বিপদে ফেলে দেয়। নবমতঃ হুমায়ুনের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল আফগান শক্তির উত্থান। গুজরাটে বাহাদুর শাহ ও বিহারে শের খাঁ (শের শাহ) আফগানাদের সংগঠিত করে হুমায়ূনকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। এর মধ্যে শেরশাহের অভ্যুত্থান ছিল হুমায়ুনের পক্ষে বিপদজনক। সাম্রাজ্যের  বৈধ উত্তরাধিকারী হওয়া সত্ত্বেও হুমায়ুনের পক্ষে এই পরিস্থিতিতে সাম্রাজ রক্ষা করা কঠিন হয়ে ওঠে।

         এই সকল সমস্যাগুলি মোকাবিলা  করার  জন্য প্রয়োজন ছিল একজন দক্ষ সংগঠন ও সামরিক এবং কূটনৈতিক দক্ষতা-সম্পন্ন দৃঢ় চরিত্রের শাসকের। কিন্তু হুমায়ুনের চরিত্রে দৃঢ়তার অভাব ছিল। তাছাড়া হুমায়ুন একনাগাড়ে কোন কঠিন কাজ করতে পারতেন না। সে কারণেই হয়তো ভাগ্যদেবীর সহায়তা তিনি পাননি। ঐতিহাসিক লেনপুল বলেছেন- “His name means fortune and never was an unlucky sovereign more miscalled.”



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন