সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা কী ? এই পরিকল্পনার মাধ্যমে কীভাবে ভারত বিভাগ করা হয় ? এই পরিকল্পনার বিষয়ে ভারতীয় নেতাদের প্রতিক্রিয়া কী ছিল ?

ভূমিকা : স্বাধীনতা লাভের জন্য ভারতবাসীর তীব্র আকাঙ্ক্ষা, সংগ্রাম ব্রিটিশকে বাধ্য করে স্বাধীনতাদান প্রশ্নের মীমাংসা করতে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার অবসান ঘটাতে ব্রিটিশ সরকার দেশভাগ অনিবার্য বলে মেনে নেয়। জিন্নার পাকিস্তান রাষ্ট্রের দাবির প্রতি আকাঙ্ক্ষা এবং তাতে জওহরলাল ও প্যাটেলের সম্মতি থাকায় মাউন্টব্যাটেনের উপদেষ্টা লর্ড ইসম ভারতভাগের পরিকল্পনা পাঠান ব্রিটিশ পার্লামেন্টে (১৯৪৭ খ্রি., ২ মে)। পার্লামেন্টে প্রস্তাবটি ‘ভারতীয় স্বাধীনতা আইন’ রূপে পাস হয় (যদিও রাজকীয় সম্মতি লাভ করে ১৯৪৭ খ্রি., ১৮ জুলাই), যা ‘মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা’ হিসেবে পরিচিত। মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনার চূড়ান্ত পরিণাম দেশভাগ। এ প্রসঙ্গে ড. বিপান চন্দ্র বলেছেন—আমরা এটা ভুলে গিয়েছিলাম যে, ১৯৪৭-এ নেহরু, প্যাটেল ও গান্ধিজি শুধু যা অবশ্যম্ভাবী তাকেই মেনে নিয়েছিলেন। 

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা

পটভূমি  

[1] মাউন্টব্যাটেনের আগমন : ভারতে ক্ষমতা হস্তান্তরের কাজ দ্রুত সম্পাদনের জন্য ব্রিটিশ পার্লামেন্ট লর্ড ওয়াভেলের জায়গায় লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে ভাইসরয় নিয়োগ করে ভারতে পাঠায় (২৪ মার্চ, ১৯৪৭ খ্রি.)। 

[2]মাউন্টব্যাটেনের লক্ষ্য: মাউন্টব্যাটেনের লক্ষ্য ছিল অখণ্ড ভারত। তাই ২৪ মার্চ থেকে ৬ মে-র মধ্যে তিনি ভারতীয় নেতৃমণ্ডলী ও রাজন্যবর্গের সঙ্গে ১৩৩টি বৈঠক করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই নতুন বড়োলটি বুঝে নেন যে, ভারত বিভাগ ছাড়া ভারতীয় সমস্যার কোনো সমাধান নেই। একাজে বিলম্ব হলে পাঞ্জাব, বাংলাসহ বহু স্থানে হিংসার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়বে আশঙ্কা করে পরামর্শের জন্য মে মাসে তিনি ইংল্যান্ড যান। ব্রিটিশ সরকারের অনুমোদন নিয়ে ফিরে এসে ৩ জুন তিনি ভারত বিভাগের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। তিনি জানান সম্ভবত ১৫ আগস্টের (১৯৪৭ খ্রি.) মধ্যেই ক্ষমতা হস্তান্তর সম্পন্ন করা হবে। মাউন্টব্যাটেনের এই পরিকল্পনা ও ঘোষণা ‘মাউন্টব্যাটেন প্রস্তাব’ বা ‘মাউন্টব্যাটেন রোয়েদাদ’ (Mountbatten Award) নামে খ্যাত।

বিভিন্ন প্রস্তাব

মাউন্টব্যাটেনের প্রস্তাবে বলা হয় — 

[1] ভারতবর্ষকে বিভক্ত করে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি ডোমিনিয়নের সৃষ্টি করা হবে। ডোমিনিয়ন দুটি সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বিষয়সমূহ পরিচালনা করবে। 

[2] মুসলমান প্রধান প্রদেশ — সিন্ধু, ব্রিটিশ বালুচিস্তান, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, পশ্চিম পাঞ্জাব ও পূর্ব বাংলা নিয়ে 'পাকিস্তান' গড়া হবে। 

[3] পাঞ্জাব ও বাংলাকে বিভক্ত করে কোন অঞ্চলকে কোন ডোমিনিয়নের সঙ্গে যুক্ত করা হবে তা নির্ধারণের জন্য একটি ‘সীমানা নির্ধারণ কমিশন’ ক্ষমতা হস্তান্তরের আগেই গঠিত হবে। 

[4] আসামের শ্রীহট্ট জেলা কোন ডোমিনিয়নের সঙ্গে যুক্ত হবে তা গণভোটে স্থির হবে। 

[5] দেশীয় রাজাগুলি নিজ নিজ রাজ্যে সার্বভৌম ক্ষমতা লাভ করবে এবং ইচ্ছা করলে তারা যে-কোনো ডোমিনিয়নে যোগ দিতে পারবে। 

[6] প্রতি ডোমিনিয়নের নির্বাচিত গণপরিষদ নিজ এলাকার সংবিধান রচনা করবে। 

[7] যতদিন না সংবিধান রচিত হচ্ছে ততদিন ব্রিটিশ সরকার নিযুক্ত একজন গভর্নর-জেনারেল এই ডোমিনিয়নে থাকবেন। 

[8] স্বাধীনতা লাভের পর ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কোনো আইন ওই দুই ডোমিনিয়নে বলবৎ থাকবে না। প্রতি ডোমিনিয়নের নির্বাচিত আইনসভা নিজ নিজ দেশের জন্য আইন রচনা করবে।

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনার মাধ্যমে ভারত বিভাজন পদ্ধতি

[1] শীর্ষনেতৃবর্গের সঙ্গে আলোচনার সূত্রে : ভাইসরয় মাউন্টব্যাটেন প্রায় দেড় মাসের মধ্যে (১৯৪৭ খ্রি., ৬ মে-র মধ্যে) গান্ধিজি, জওহরলাল, বল্লভভাই প্যাটেল, জিন্না ও দেশীয় রাজাদের সঙ্গে প্রায় ১৩৩ বার বৈঠকে বসেন। কিন্তু তাঁর সদর্থক ইচ্ছার অভাবে ও জিন্নার একগুঁয়েমির জন্য সকল আলোচনাই ভেস্তে যায়। মাউন্টব্যাটেন সিদ্ধান্তে এলেন যে, ক্যাবিনেট মিশন বা মন্ত্রীমিশন নির্ধারিত ব্যবস্থাপনার পরিবর্তে এক বিকল্প পরিকল্পনা রচনা করা দরকার।

[2] বলকান পরিকল্পনা রচনার মাধ্যমে : বিকল্প পরিকল্পনা হিসেবে মাউন্টব্যাটেন বলকান পরিকল্পনা (Plan Balkan) অনুসরণ করেন। এই পরিকল্পনায় পাঞ্জাব ও বাংলা ভাগের প্রস্তাব রাখা হয় এবং বলা হয় যেসকল প্রদেশ বা উপপ্রদেশ সাংবিধানিক সভায় যোগ দেবে তাদেরও ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। কিন্তু নেহরু ও জিন্না এই পরিকল্পনাকে গ্রহণ না করায় বলকান পরিকল্পনা তার কার্যকারিতা হারায়। ভারত বিভাজনের সমস্যা আরও জটিল হয়ে ওঠে।

[3] প্ল্যান পার্টিশানের রূপায়ণের দ্বারা : মাউন্টব্যাটেন হতোদ্যম না হয়ে দেশভাগ ও ক্ষমতা হস্তান্তরের উপর আরও বেশি করে জোর দেন। তিনি ভারত বিভাজনের লক্ষ্যে প্ল্যান পার্টিশান নামক এক পরিকল্পনা পেশ করেন। নেহরু ও ভি.পি. মেননের সাহায্য নিয়ে তিনি এই পরিকল্পনা রচনা করেন। এই পরিকল্পনায় বলা হয়—ভারত ও পাকিস্তান দুপক্ষের ডোমিনিয়ন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। মাউন্টব্যাটেনের এই কু-চাল বুঝেও নেহরু অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে একে মেনে নেন। জিন্নাও এই প্রস্তাব মেনে নিলে মাউন্টব্যাটেন ক্ষমতা- হস্তান্তরের তারিখ ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের জুন মাস থেকে এগিয়ে নিয়ে এসে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট নির্ধারণ করেন।

[4] ভারতীয় স্বাধীনতা আইন পাশের মাধ্যমে : মাউন্টব্যাটেনের প্রস্তাব মেনে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় স্বাধীনতা বিল রচনা করে। আইনসভায় পাশ হওয়ার (১৬ জুলাই) পর সম্রাট ষষ্ঠ জর্জ বিলটিতে সম্মতি জ্ঞাপন করেন (১৮) জুলাই)। বিলটি আইনে পরিণত হলে বড়োলাট মাউন্টব্যাটেন তা কার্যকর করে ইন্ডিয়া ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন ডোমিনিয়নের প্রতিষ্ঠা ঘটান।

[5] কংগ্রেস ও লিগের সাহায্য নিয়ে : গান্ধিজি ও মৌলানা আজাদ দেশভাগের ঘোর বিরোধী হলেও নেহরু ও প্যাটেলের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস কার্যকরী সমিতি শেষপর্যন্ত ভারত বিভাজনে সায় দিয়েছিল। কংগ্রেসের পাশাপাশি মুসলিম লিগও মাউন্টব্যাটেন প্রস্তাব মেনে নিলে ভারত বিভাজন সম্ভব হয়। আসলে পাঞ্জাব ও বাংলায় হাজার হাজার মুসলিম যেভাবে আলাদা রাষ্ট্রের দাবিতে সক্রিয় হয়ে উঠছিল তাকেই বৈধতা দিয়েছিলেন মাউন্টব্যাটেন। উইনস্টন চার্চিলের প্ররোচনায় প্ররোচিত হয়ে জিন্নার নেতৃত্বাধীন মুসলিম লিগ আলাদা পাকিস্তান রাষ্ট্রের দাবিতে অনড় থাকায় মাউন্টব্যাটেনের পক্ষে ভারত বিভাজন করা সহজ হয়।

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা ও ভারতীয় নেতাদের প্রতিক্রিয়া 

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনার বিরোধীতা করেছিল ভারতের বিভিন্ন দল ও সম্প্রদায়ের নেতৃবর্গ।

[1] জওহরলাল নেহরু এক নেতার ভাষনে আক্ষেপের সুরে বলেন- আমি এই প্রস্তাব (ভারত বিভাজনে) হৃদয়ের কোনো আনন্দের সঙ্গে তুলছি না। যদিও এ বিষয়ে আমার মনে কোনো সংশয় নেই যে এটি হল শ্রেষ্ঠ বিকল্প।

[2] মহাত্মা গান্ধি মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন—আমি স্পষ্ট রূপে দেখতে পাচ্ছি সমস্যা সমাধানের পক্ষে আমরা ভুলভাবে এগোচ্ছি।

[3] মৌলানা আবুল কালাম আজাদ এই পরিকল্পনা মেনে দেশভাগ হলে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন—দেশভাগ হল এক দৈব দুর্বিপাক।

[4] সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল দেশভাগের এই পরিকল্পনাকে মন থেকে মেনে নিতে না পারলেও বলেন—দেশভাগ ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না।

[5] ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দেশভাগের নির্দেশ সম্বলিত এই পরিকল্পনার প্রতি প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন—গৃহযুদ্ধের থেকে দেশভাগ ভালো ।

[6] মহম্মদ আলি জিন্না বলেন—মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনায় ঘোষিত পাকিস্তান আসলে বিকলাঙ্গ ও কীটদগ্ধ।

মন্তব্য: ভারত বিভাজন তথা ভারত ও পাকিস্তান এই দুটি আলাদা রাষ্ট্র সৃষ্টির জন্য মাউন্টব্যাটেন তাঁর দায় এড়াতে পারেন না। আসলে গৃহযুদ্ধ বন্ধ করার অজুহাতে মাউন্টব্যাটেন সুচতুরভাবে ভারত বিভাজনের পরিকল্পনা রূপায়ণ করেন। এ প্রসঙ্গে মৌলানা আবুল কালাম আজাদ তাঁর 'India wins Freedom' নামক আত্মজীবনীতে লিখেছেন—মাউন্টব্যাটেন প্রথম পাকিস্তান গঠনের অনুকূলে মত দেন এবং শাসন পরিষদের কংগ্রেস সদস্যদের মনে এই মতলবের বীজ বপন করেন।



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ক্রিপস মিশন কেন ভারতে এসেছিল ? ক্রিপস মিশনের প্রস্তাব‌ গুলি কী ছিল ? এক্ষেত্রে ভারতীয়দের কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল ?

সূচনা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ভারতের ব্রিটিশ সরকার ভারতবাসীর আর্থিক ও সামরিক সাহায্য প্রার্থনা করে। যদিও কংগ্রেস এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়, ফলে এক রাজনৈতিক অচলাবস্থা দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ মন্ত্রীসভার সদস্য স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপসের নেতৃত্বে ক্রিপস মিশন ভারতে আসে (১৯৪২ খ্রি.) ও এক প্রস্তাব পেশ করে যা ক্রিপস প্রস্তাব নামে পরিচিত। ক্রিপস্ প্রস্তাব সম্পর্কে ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল বলেছিলেন—আমাদের সততা প্রমাণের জন্যই ক্রিপস মিশন অপরিহার্য ('The Cripps Mission is indispensable to prove our honesty of purpose') ! পটভূমি / কারণ    ক্রিপস্ মিশনের ভারতে আসার পটভূমি বা কারণগুলি হলো –  [1] জাপানি আক্রমণ প্রতিরোধ : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন (১৯৪১ খ্রি., ৭ ডিসেম্বর) জাপান হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের পার্লহারবারে অবস্থিত মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করে অক্ষশক্তির পক্ষে যুদ্ধে যোগদান করলে বিশ্ব রাজনীতিতে এক গুরুতর পরিবর্তন ঘটে। একে একে ফিলিপাইন, ইন্দোচিন, ইন্দোনেশিয়া, মালয় ও ব্রহ্মদেশ বিধ্বস্ত করে (১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৮ মার্চ) জাপান ভারতের নিকটে এসে হাজ...

ম্যানর ব্যবস্থা বলতে কি বোঝ ?

ম্যানর ব্যবস্থা        সামন্ততন্ত্রের ভিতর থেকে তার আবশ্যিক অঙ্গ হিসাবে ম্যানর প্রথার বিকাশ ঘটেছিল। ম্যানর প্রথা প্রকৃতপক্ষে সামন্তযুগের কৃষিভিত্তিক সমাজে একটি অর্থনৈতিক সংগঠন, একে সামন্ততান্ত্রিক উৎপাদন পদ্ধতির গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ম্যানর প্রথা অনেক সময় সিনোরীয় প্রথা নামেও পরিচিত। মূলত সামন্ততন্ত্রে ভূস্বামী কর্তৃক কৃষক শোষণের যে পরিকাঠামো গড়ে উঠেছিল ম্যানর প্রথা ছিল তারই সাংগঠনিক ভিত্তি। সামন্তপ্রভু এবং ম্যানরে বসবাসকারী শ্রমজীবী মানুষের খাদ্যের জোগান আসত ম্যানর থেকে।        ম্যানরের অভ্যন্তরীণ কাঠামো ছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ। একটি ম্যানরের জমিকে দুইভাগে ভাগ করা হত—(1) সামন্তপ্রভুর খাস জমি বা ডিমেইনে, (2) স্বাধীনস্বত্বসম্পন্ন জমি বা ভিলেইন। এই জমির মাধ্যমে কৃষক সামন্তপ্রভুর সঙ্গে একটি অচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ থাকত। সামন্ততন্ত্রের মতো ম্যানর প্রথার উৎস রয়েছে প্রাচীন রোমান ও জার্মানদের স্থানীয় সংগঠনের মধ্যে। ম্যানর প্রথার প্রধান শক্তি ছিল ভূমিদাস। এই ভূমিদাসরা আক্রমণকারী যোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে ভূমিদাসে রূপান্তরিত হয়। ...

খুত ও মুকদ্দম কাদের বলা হত? কে, কেন তাদের কঠোরভাবে দমন করার চেষ্টা করেন ?

খুত ও মুকদ্দম         বাজার দর নিয়ন্ত্রণ এবং জীবন নির্বাহের ব্যয় হ্রাস করেই আলাউদ্দিন খলজি সন্তুষ্ট হতে পারেননি। রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থাকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য তিনি বিভিন্ন ব্যবস্থা অবলম্বন করার জন্য সচেষ্টও হয়ে ওঠেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি রাজস্ব বিভাগের সংস্কারের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে শুরু করেন। রাষ্ট্রের অধীনে খাদ্য ও জমি বৃদ্ধির জন্য তিনি সর্বপ্রথম বিভিন্ন শ্রেণীর অবলম্বন করার জন্য সচেষ্ট হয়ে ওঠেন। তিনি মুসলিম অভিজাত সম্প্রদায় ও ধার্মিক ব্যক্তিদের মিলক্, ইনাম, ইদ্দ্ররাৎ এবং ওয়াকফ জমি রাষ্ট্রের অধীনে পুনরায় আনয়নের চেষ্টা করেন। মুসলিম অভিজাত সম্প্রদায়র ও ধার্মিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পরই সুলতান অলাউদ্দিন খলজি খুত, চৌধুরী ও মুকদ্দম নামে পরিচিত হিন্দু অভিজাতবর্গের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। “খুত” শব্দটির প্রকৃত সংজ্ঞা সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও সম্ভবত পরবর্তীকালে যার জমিদার নামে পরিচিতি লাভ করেন আলাউদ্দিনের-রাজত্বকালে তাঁরা খুত নামে পরিচিত ছিলেন। “চৌধুরী” ছিলেন পরগণার প্রধান ব্যক্তি এবং “মুকদ্দম” ছিলেন গ্রামের প্রধান। রাষ্ট্রের প্...