সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ফরাসী বিপ্লবে রুশোর অবদান কি ছিল

জাঁ জ্যাক্স রুশো


ফরাসী বিপ্লবে রুশোর অবদান কি ছিল


ফরাসী জ্ঞানদীপ্তির এক কালজয়ী প্রতিনিধি জাঁ জ্যাক্স রুশো (১৭১২-১৭৭৮)। তিনি সমসাময়িক সামাজিক ব্যবস্থার এক তিক্ত সমালোচক ছিলেন। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ-"Discourse on the Origin of Inequality" প্রকাশিত হয় ১৭৫৫ সালে। এই গ্রন্থে তিনি বলিষ্ঠ যুক্তির মাধ্যমে দেখিয়েছিলেন যে, সমস্ত মানবসমাজই দুর্নীতিগ্রস্ত, কারণ সেখানে মানুষ একে অপরের ওপর প্রভুত্ব করতে চায়। এমনকি ফ্রান্সের মতো অগ্রসর সমাজেও মানুষের প্রকৃতি নষ্ট করে দিয়েছে তার অহংকার ও স্বার্থপরতা। ১৭৬২ সালে প্রকাশিত "Discourse on the Arts and the Science" গ্রন্থে রুশো লিখেছিলেন যে, সভ্যতার অগ্রগতি মানুষের স্বাভাবিক ভালোত্বকে নষ্ট করেছে; আর এটাই রাষ্ট্রনৈতিক চিন্তার মৌলিক নীতি। রুশো আন্তরিক ভাবে বিশ্বাস করতেন যে, মানুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তি বৃদ্ধির প্রবল আকাঙ্খা ও তীব্র প্রয়াস সমাজে সম্পদের বৈষম্য বাড়িয়ে তোলে, আর সেটাই মানবসামাজের সমস্ত খারাপের উৎস। 


জাঁ জ্যাক্ রুশো
জাঁ জ্যাক্ রুশো


১৭৬২ সালে প্রকাশিত হয় রুশোর বিখ্যাত গ্রন্থ "Social Contract"। এখানে তিনি লেখেন- "মানুষ জন্মগত স্বাধীন এবং সর্বত্রই সে শৃঙ্খলে আবদ্ধ"। এই গ্রন্থে তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধানে প্রয়াসী হন। তা হল মানুষ তার ব্যক্তিস্বাধীনতা বিসর্জন না দিয়েও কীভাবে সমাজে সংঘবদ্ধভাবে সুরক্ষা ও ন্যায় নিশ্চিত করতে পারে। রুশো কল্পনা করেছিলেন যে, এমন একটি "সামাজিক চুক্তি" সম্পাদিত হবে, যার মাধ্যমে ব্যক্তি তার স্বাভাবিক অধিকার "সাধারণের ইচ্ছা"র (General Will) কাছে সমর্পণ করবেন। রুশোর কাছে 'সধারণের ইচ্ছা' ছিল সমান রাজনৈতিক অধিকার ভোগকারী নাগরিকদের মধ্যে ঐক্যমত্য। রুশো বিশ্বাস করতেন যে, একমাত্র প্যক্ষ গণতন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল রাজনৈতিক ব্যবস্থাই শোষণ ও নিপীড়নের সার্বজনীন প্রবণতার পথ রুদ্ধ করতে পারে। একথা অনস্বীকার্য যে, "মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকারের ঘোষণাপত্রের" মতো বিপ্লবী দলিল অবশ্যই রুশোর চিন্তাধারার কাছে ঋণী। তাছারা আবে সিয়ে থেকে রোবসপিয়ার পর্যন্ত ফরাসি বিপ্লবের বহু নেতার লেখায় ও বক্তৃতায় রুশোর রাষ্ট্রচিন্তার প্রভাব ছিল স্পষ্ট।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ক্রিপস মিশন কেন ভারতে এসেছিল ? ক্রিপস মিশনের প্রস্তাব‌ গুলি কী ছিল ? এক্ষেত্রে ভারতীয়দের কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল ?

সূচনা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ভারতের ব্রিটিশ সরকার ভারতবাসীর আর্থিক ও সামরিক সাহায্য প্রার্থনা করে। যদিও কংগ্রেস এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়, ফলে এক রাজনৈতিক অচলাবস্থা দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ মন্ত্রীসভার সদস্য স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপসের নেতৃত্বে ক্রিপস মিশন ভারতে আসে (১৯৪২ খ্রি.) ও এক প্রস্তাব পেশ করে যা ক্রিপস প্রস্তাব নামে পরিচিত। ক্রিপস্ প্রস্তাব সম্পর্কে ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল বলেছিলেন—আমাদের সততা প্রমাণের জন্যই ক্রিপস মিশন অপরিহার্য ('The Cripps Mission is indispensable to prove our honesty of purpose') ! পটভূমি / কারণ    ক্রিপস্ মিশনের ভারতে আসার পটভূমি বা কারণগুলি হলো –  [1] জাপানি আক্রমণ প্রতিরোধ : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন (১৯৪১ খ্রি., ৭ ডিসেম্বর) জাপান হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের পার্লহারবারে অবস্থিত মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করে অক্ষশক্তির পক্ষে যুদ্ধে যোগদান করলে বিশ্ব রাজনীতিতে এক গুরুতর পরিবর্তন ঘটে। একে একে ফিলিপাইন, ইন্দোচিন, ইন্দোনেশিয়া, মালয় ও ব্রহ্মদেশ বিধ্বস্ত করে (১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৮ মার্চ) জাপান ভারতের নিকটে এসে হাজ...

ম্যানর ব্যবস্থা বলতে কি বোঝ ?

ম্যানর ব্যবস্থা        সামন্ততন্ত্রের ভিতর থেকে তার আবশ্যিক অঙ্গ হিসাবে ম্যানর প্রথার বিকাশ ঘটেছিল। ম্যানর প্রথা প্রকৃতপক্ষে সামন্তযুগের কৃষিভিত্তিক সমাজে একটি অর্থনৈতিক সংগঠন, একে সামন্ততান্ত্রিক উৎপাদন পদ্ধতির গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ম্যানর প্রথা অনেক সময় সিনোরীয় প্রথা নামেও পরিচিত। মূলত সামন্ততন্ত্রে ভূস্বামী কর্তৃক কৃষক শোষণের যে পরিকাঠামো গড়ে উঠেছিল ম্যানর প্রথা ছিল তারই সাংগঠনিক ভিত্তি। সামন্তপ্রভু এবং ম্যানরে বসবাসকারী শ্রমজীবী মানুষের খাদ্যের জোগান আসত ম্যানর থেকে।        ম্যানরের অভ্যন্তরীণ কাঠামো ছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ। একটি ম্যানরের জমিকে দুইভাগে ভাগ করা হত—(1) সামন্তপ্রভুর খাস জমি বা ডিমেইনে, (2) স্বাধীনস্বত্বসম্পন্ন জমি বা ভিলেইন। এই জমির মাধ্যমে কৃষক সামন্তপ্রভুর সঙ্গে একটি অচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ থাকত। সামন্ততন্ত্রের মতো ম্যানর প্রথার উৎস রয়েছে প্রাচীন রোমান ও জার্মানদের স্থানীয় সংগঠনের মধ্যে। ম্যানর প্রথার প্রধান শক্তি ছিল ভূমিদাস। এই ভূমিদাসরা আক্রমণকারী যোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে ভূমিদাসে রূপান্তরিত হয়। ...

খুত ও মুকদ্দম কাদের বলা হত? কে, কেন তাদের কঠোরভাবে দমন করার চেষ্টা করেন ?

খুত ও মুকদ্দম         বাজার দর নিয়ন্ত্রণ এবং জীবন নির্বাহের ব্যয় হ্রাস করেই আলাউদ্দিন খলজি সন্তুষ্ট হতে পারেননি। রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থাকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য তিনি বিভিন্ন ব্যবস্থা অবলম্বন করার জন্য সচেষ্টও হয়ে ওঠেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি রাজস্ব বিভাগের সংস্কারের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে শুরু করেন। রাষ্ট্রের অধীনে খাদ্য ও জমি বৃদ্ধির জন্য তিনি সর্বপ্রথম বিভিন্ন শ্রেণীর অবলম্বন করার জন্য সচেষ্ট হয়ে ওঠেন। তিনি মুসলিম অভিজাত সম্প্রদায় ও ধার্মিক ব্যক্তিদের মিলক্, ইনাম, ইদ্দ্ররাৎ এবং ওয়াকফ জমি রাষ্ট্রের অধীনে পুনরায় আনয়নের চেষ্টা করেন। মুসলিম অভিজাত সম্প্রদায়র ও ধার্মিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পরই সুলতান অলাউদ্দিন খলজি খুত, চৌধুরী ও মুকদ্দম নামে পরিচিত হিন্দু অভিজাতবর্গের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। “খুত” শব্দটির প্রকৃত সংজ্ঞা সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও সম্ভবত পরবর্তীকালে যার জমিদার নামে পরিচিতি লাভ করেন আলাউদ্দিনের-রাজত্বকালে তাঁরা খুত নামে পরিচিত ছিলেন। “চৌধুরী” ছিলেন পরগণার প্রধান ব্যক্তি এবং “মুকদ্দম” ছিলেন গ্রামের প্রধান। রাষ্ট্রের প্...