সপ্তদশ শতাব্দীতে আমস্টারডম কেন সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল।

আমস্টারডম গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পরিণত হত্তয়ার কারণ 

     

সপ্তদশ শতাব্দীতে আমস্টারডম কেন সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল।

             নেদারল্যান্ডের  বিদ্রোহ বা  ওলন্দাজদের স্বাধীনতা যুদ্ধ ইউরোপের ষোড়শ  শতাব্দীর  ইতিহাসের অন্যতম ঘটনা। এই যুদ্ধের  ফলেই নেদারল্যান্ড ও হল্যান্ডের যুক্তপ্রদেশ বিরাট বাণিজ্যিক দেশে পরিণত হয়। তবে স্বাধীনতা প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গেই এই পরিবর্তন সম্ভব হয়নি। তাদের এই পরিবর্তন আনয়ন করতে প্রায় এক শতাব্দী সময় লেগেছিল। অত্যন্ত অধ্যবসায়ের সঙ্গে ওলন্দাজগণ তাদের অগ্রগতি অব্যাহত রাখে এবং স্পেনের পরিবর্তে আর একটি বিরাট অর্থনৈতিক বাজার সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়। তবে স্বাধীনতাই ছিল তাদের উন্নতির মূল চাবিকাঠি। স্বাধীনতালাভের সঙ্গে সঙ্গে নেদারল্যান্ডের আধিবাসীদের মনে একটি নতুন জাতীয় চেতনার সৃষ্টি হয় এবং নেদারল্যান্ডকে ইউরোপের অন্যতম প্রধান শক্তিতে পরিণত করার জন্য সেদেশের সকল অধিবাসীই সচেষ্ট হয়। তবে সমকালীন পরিস্থিতি তাদের অনুকূলে থাকার জন্য নেদারল্যান্ডের উন্নতির পথের সকল বাধা দূর করা সম্ভব হয়। ইংল্যান্ডের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল তাদের উন্নতির অন্যতম প্রধান কারণ। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এই দুটি দেশের মধ্যে তখন প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবার্ত সহযোগিতার সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল। তাছাড়া পূর্বভারতীয দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে পোর্তুগালের বাণিজ্যের অবনতি এবং হ্যানসিয়াটিক লীগ-এর পতন এই ব্যাপারে তাদের যথেষ্ট পরিমাণে সাহায্য করে। 

         আমেরিকা থেকে আসা স্বর্ণ বোঝাই স্পেনের জাহাজগুলো লুণ্ঠন করা তাদের পক্ষে সহজ হয়ে ওঠে এবং বালটিক সাগরের পথে সুইডেন থেকে প্রচুর পরিমাণে বনজ সম্পদ তারা সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়। নেদারল্যান্ডের অধিবাসীরা প্রকৃতিগতভাবেই নিরলস, পরিশ্রমী এবং কষ্টসহিষ্ণু। স্বাধীনতা লাভের পর তারা ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য বিস্তারের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে শুরু করে। ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ না হয়ে তারা প্রাচ্যদেশে উপনিবেশ বিস্তারের সুযোগ খুঁজতে শুরু করে। সিংহল ছাড়াও পূর্বভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের একটি বিরাট অঞ্চলের উপর ধীরে ধীরে তাদের কর্তৃত্ব স্থাপিত হয়। ফলে মশলার ব্যবসা প্রায় একচেটিয়া ভাবে তাদের হস্তগত হয়। ইউরোপের সকল দেশেই তখন মশলার খুব চাহিদা থাকায় আমস্টারডাম ও তার প্রতিবেশী রটারডামের অর্থনৈতিক গুরুত্ব দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। বিশেষত, হীরা, মণি, মুক্তা ও মূল্যবান পাথরের ক্রয়-বিক্রয় কেন্দ্র হিসাবে অল্পদিনের মধ্যে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করে। এই সময় অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও নেদারল্যান্ড খুব উন্নতি করে। কৃষি-সম্পদ ছাড়াও হেরিং মাছের একচেটিয়া ব্যবসা ওলন্দাজদের অর্থনৈতিক অবস্থাকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলে। স্বাধীনতা লাভের পঁচিশ থেকে ত্রিশ বছরের মধ্যে ওলন্দাজদের মালবাহী জাহাজগুলো পৃথিবীর সকল বন্দরে উপস্থিত হতে শুরু করে এবং হল্যান্ড পৃথিবীর শস্যাগারে পরিণত হয়। বাণিজ্যিক কারণে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের জাহাজগুলোও হল্যান্ডের বন্দরগুলোতে আসতে বাধ্য হত। আমস্টারডামের ব্যাঙ্ক ইউরোপের ব্যাঙ্কে পরিণত হয়। এই সময় লন্ডন শহরে মাত্র একটি ব্যাঙ্ক স্থাপিত হয়েছিল কিন্তু নেদারল্যান্ডের প্রায় বড় সব শহরগুলোতেই ব্যাঙ্কের একাধিক শাখা স্থাপিত হয়েছিল।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন