আদিনা মসজিদ কে তৈরি করেন? এর স্থাপত্যগত বৈশিষ্ট্যগুলো কি ছিল?

আদিনা মসজিদ এর স্থাপত্যগত বৈশিষ্ট্য


আদিনা মসজিদ কে তৈরি করেন? এর স্থাপত্যগত বৈশিষ্ট্যগুলো কি ছিল?


      আদিনা মসজিদ – ইলিয়াস শাহী বংশের দ্বিতীয় সুলতান সিকন্দর শাহ ১৩৬৯ বা ১৩৭৪ খ্রিস্টাব্দে এই মসজিদটির নির্মাণ কার্য শেষ করেন। মালদহ জেলার পান্ডুয়ার এক মাইল উত্তরে এই মসজিদের অবস্থান। মুসলিম যুগের বাংলাদেশের স্থাপত্য শিল্পের প্রথম নিদর্শন আদিনা মসজিদ পূর্বভারতের বৃহত্তম এবং ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম মসজিদ। এই মসজিদ দৈর্ঘে ৫০৭ ফুট ৬ ইঞ্চি, এবং প্রস্থে ২৮৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। চারদিকের আচ্ছাদিত পথ বাদেও এই মসজিদের প্রাঙ্গণের দৈর্ঘ্য ৩৯৭ ফুট এবং প্রস্থ ১৫২ ফুট। মসজিদের পিছনের প্রাচীরের নিকট মিহবার অর্থাৎ প্রার্থনার কুলুঙ্গি এবং উত্তর দিকে মিমবার বা প্রাচীর বেদী অবস্থিত। প্রাচীর বেদীর কিছু দূরে আটফুট উঁচুতে বাদশাহ-কা-তক্ত- সম্ভবত রাজ-পরিবারের সদস্যদের জন্য এই স্থানটি নির্দিষ্ট ছিল। বর্তমানে মসজিদটি অনেকাংশই প্রাকৃতিক কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এর ধবংসাবশেষের মধ্যে হিন্দু মন্দিরের উপকরণ দেখতে পাওয়া যায়। বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তি, পদ্মফুল এবং অন্যান্য হিন্দু স্থাপত্যের নিদর্শন দেখে অনেকেই মনে করেন যে সম্ভবত কোন হিন্দুমন্দির ধবংস করেই এই বিশালাকৃতির মসজিদটি তৈরি করা হয়েছিল। তাহলে আদিনা মসজিদকে বাংলাদেশের মুসলিম স্থাপত্যকলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন বলা যেতে পারে।


         আদিনা  মসজিদের  স্থাপত্য শৈলীর কয়েকটি বৈশিষ্ট্য সকল দর্শকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করে।সারিসারি স্তম্ভ দিয়ে চারভাগে বিভক্ত মসজিদের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণটিকে মোট ৩৭৮টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বর্গক্ষেত্রে বিভক্ত করা হয়েছিল এবং প্রত্যেকটি বর্গক্ষেত্র এক একটি গম্বুজাকৃতি দিয়ে আচ্ছাদিত ছিল। যদিও বৈচিত্র্যহীন স্তম্ভ ও বর্গক্ষেত্রাকৃতি স্থাপত্যরীতি দর্শকদের কাছে অনেকাংশে ক্লান্তিকর মনে হলেও এই বিশাল স্থাপত্যকীর্তির পরিকল্পনা তাদের বিস্মিত করে আদিনা। মসজিদের স্থাপত্য শৈলীয় আর একটি বৈশিষ্ট্য হল, এই বিশালাকৃতির মসজিদের আড়ম্বরপূর্ণ কোন তোরণ বা প্রবেশদ্বার নেই। পূর্বদিকের কেন্দ্রস্থলে ধনুকাকৃতি খিলানযুক্ত, একটি প্রশস্ত পথ এবং পূর্বদিকের শেষপ্রান্তের তিনটি সংকীর্ণ পথ সম্ভবত জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট ছিল। মসজিদের পশ্চিম দিকের প্রবেশদ্বারগুলো সম্ভবত মোল্লা-মৌলবী ও অন্যান্য সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। আদিনা মসজিদের পশ্চিমদিকে একটি বর্গাকৃতি সমাধি দেখা যায়-সম্ভবত সুলতান সিকন্দর শাহকে এখানে সমাধিস্থ করা হয়েছিল।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন