সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

ম্যানর ব্যবস্থা বলতে কি বোঝ ?

ম্যানর ব্যবস্থা        সামন্ততন্ত্রের ভিতর থেকে তার আবশ্যিক অঙ্গ হিসাবে ম্যানর প্রথার বিকাশ ঘটেছিল। ম্যানর প্রথা প্রকৃতপক্ষে সামন্তযুগের কৃষিভিত্তিক সমাজে একটি অর্থনৈতিক সংগঠন, একে সামন্ততান্ত্রিক উৎপাদন পদ্ধতির গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ম্যানর প্রথা অনেক সময় সিনোরীয় প্রথা নামেও পরিচিত। মূলত সামন্ততন্ত্রে ভূস্বামী কর্তৃক কৃষক শোষণের যে পরিকাঠামো গড়ে উঠেছিল ম্যানর প্রথা ছিল তারই সাংগঠনিক ভিত্তি। সামন্তপ্রভু এবং ম্যানরে বসবাসকারী শ্রমজীবী মানুষের খাদ্যের জোগান আসত ম্যানর থেকে।        ম্যানরের অভ্যন্তরীণ কাঠামো ছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ। একটি ম্যানরের জমিকে দুইভাগে ভাগ করা হত—(1) সামন্তপ্রভুর খাস জমি বা ডিমেইনে, (2) স্বাধীনস্বত্বসম্পন্ন জমি বা ভিলেইন। এই জমির মাধ্যমে কৃষক সামন্তপ্রভুর সঙ্গে একটি অচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ থাকত। সামন্ততন্ত্রের মতো ম্যানর প্রথার উৎস রয়েছে প্রাচীন রোমান ও জার্মানদের স্থানীয় সংগঠনের মধ্যে। ম্যানর প্রথার প্রধান শক্তি ছিল ভূমিদাস। এই ভূমিদাসরা আক্রমণকারী যোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে ভূমিদাসে রূপান্তরিত হয়। ...
সাম্প্রতিক পোস্টগুলি

কখন ভাস্কো-দ্য-গামা ভারতে আসেন? তাঁর অভিযানের মূল লক্ষ্য কি ছিল?

ভাস্কো-দ্য-গামা                        ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে অটোমান তুর্কীগণ পূর্ব রোম সাম্রাজ্যের রাজধানী কনস্ত্যান্তিনোপল জয় করে নেয়। এর ফলে প্রাচ্য জগতের সঙ্গে ইউরোপের বাণিজ্যিক যোগাযোগের স্থলপথগুলো সম্পূর্ণভাবে মুসলিম শক্তির কর্তৃত্বাধীন হয়ে পড়ে। ফলে ইউরোপের বণিক সম্প্রদায় অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং জলপথে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য তারা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে। এই সময় সামুদ্রিক শক্তি হিসাবে পোর্তুগাল যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল এবং পোর্তুগালের শাসনকর্তাগণও এই ব্যাপারে খুব উৎসাহী ছিলেন। ১৪১৭ খ্রিস্টাব্দে ভাস্কো-দ্য-গামা নামে এক পোর্তুগীজ নাবিক আফ্রিকার উপকূল অতিক্রম করে ভারতবর্ষের সঙ্গে যোগাযোগের নতুন পথ আবিষ্কার করতে উদ্যোগী হন। ভাস্কো-দ্য-গামা ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দে উত্তমাশা অন্তরীপ অতিক্রম করে দক্ষিণ ভারতের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত কালিকট বন্দরে উপস্থিত হন। কালিকটের রাজা জামোরিন সেই সময় তাকে কোন বাণিজ্য কুঠি স্থাপনের অনুমতি দেননি। কিন্তু ইউরোপ থেকে ভারতে আসার জলপথ আবিষ্কার করে ভাস্কো-দ্য-গামার মনে নতুন উদ্দীপনার সৃষ্টি হয় এবং ভৌগোলিক...

খুত ও মুকদ্দম কাদের বলা হত? কে, কেন তাদের কঠোরভাবে দমন করার চেষ্টা করেন ?

খুত ও মুকদ্দম         বাজার দর নিয়ন্ত্রণ এবং জীবন নির্বাহের ব্যয় হ্রাস করেই আলাউদ্দিন খলজি সন্তুষ্ট হতে পারেননি। রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থাকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য তিনি বিভিন্ন ব্যবস্থা অবলম্বন করার জন্য সচেষ্টও হয়ে ওঠেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি রাজস্ব বিভাগের সংস্কারের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে শুরু করেন। রাষ্ট্রের অধীনে খাদ্য ও জমি বৃদ্ধির জন্য তিনি সর্বপ্রথম বিভিন্ন শ্রেণীর অবলম্বন করার জন্য সচেষ্ট হয়ে ওঠেন। তিনি মুসলিম অভিজাত সম্প্রদায় ও ধার্মিক ব্যক্তিদের মিলক্, ইনাম, ইদ্দ্ররাৎ এবং ওয়াকফ জমি রাষ্ট্রের অধীনে পুনরায় আনয়নের চেষ্টা করেন। মুসলিম অভিজাত সম্প্রদায়র ও ধার্মিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পরই সুলতান অলাউদ্দিন খলজি খুত, চৌধুরী ও মুকদ্দম নামে পরিচিত হিন্দু অভিজাতবর্গের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। “খুত” শব্দটির প্রকৃত সংজ্ঞা সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও সম্ভবত পরবর্তীকালে যার জমিদার নামে পরিচিতি লাভ করেন আলাউদ্দিনের-রাজত্বকালে তাঁরা খুত নামে পরিচিত ছিলেন। “চৌধুরী” ছিলেন পরগণার প্রধান ব্যক্তি এবং “মুকদ্দম” ছিলেন গ্রামের প্রধান। রাষ্ট্রের প্...

আদিনা মসজিদ কে তৈরি করেন? এর স্থাপত্যগত বৈশিষ্ট্যগুলো কি ছিল?

আদিনা মসজিদ এর স্থাপত্যগত বৈশিষ্ট্য       আদিনা মসজিদ – ইলিয়াস শাহী বংশের দ্বিতীয় সুলতান সিকন্দর শাহ ১৩৬৯ বা ১৩৭৪ খ্রিস্টাব্দে এই মসজিদটির নির্মাণ কার্য শেষ করেন। মালদহ জেলার পান্ডুয়ার এক মাইল উত্তরে এই মসজিদের অবস্থান। মুসলিম যুগের বাংলাদেশের স্থাপত্য শিল্পের প্রথম নিদর্শন আদিনা মসজিদ পূর্বভারতের বৃহত্তম এবং ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম মসজিদ। এই মসজিদ দৈর্ঘে ৫০৭ ফুট ৬ ইঞ্চি, এবং প্রস্থে ২৮৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। চারদিকের আচ্ছাদিত পথ বাদেও এই মসজিদের প্রাঙ্গণের দৈর্ঘ্য ৩৯৭ ফুট এবং প্রস্থ ১৫২ ফুট। মসজিদের পিছনের প্রাচীরের নিকট মিহবার অর্থাৎ প্রার্থনার কুলুঙ্গি এবং উত্তর দিকে মিমবার বা প্রাচীর বেদী অবস্থিত। প্রাচীর বেদীর কিছু দূরে আটফুট উঁচুতে বাদশাহ-কা-তক্ত- সম্ভবত রাজ-পরিবারের সদস্যদের জন্য এই স্থানটি নির্দিষ্ট ছিল। বর্তমানে মসজিদটি অনেকাংশই প্রাকৃতিক কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এর ধবংসাবশেষের মধ্যে হিন্দু মন্দিরের উপকরণ দেখতে পাওয়া যায়। বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তি, পদ্মফুল এবং অন্যান্য হিন্দু স্থাপত্যের নিদর্শন দেখে অনেকেই মনে করেন যে সম্ভবত কোন হিন্দুমন্দির ধবংস করেই এই বিশালাকৃতির মসজি...

খলজি সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠায় মালিক কাফুরের ভূমিকা আলোচনা কর।

খলজি সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠায় মালিক কাফুরের ভূমিকা           আলাউদ্দিন খলজিই সর্বপ্রথম দক্ষিণ ভারতে ইসলামের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। যদিও তাঁর পূর্বে দক্ষিণ ভারতের সঙ্গে মুসলমানদের সম্পর্ক ছিল, তথাপি তিনিই দক্ষিণ ভারতকে দিল্লীর সুলতানী সাম্রাজ্যের প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন। আলাউদ্দিনের দক্ষিণ ভারত অভিযানে রাজনৈতিক কারণ ছাড়াও অর্থনৈতিক কারণ জড়িত ছিল। সোম্রাজ্য বিস্তারের উদ্দেশ্যের সঙ্গে দক্ষিণ ভারতের অতুলনীয় ঐশ্বর্যও তাঁকে প্রলুব্ধ করেছিল। দক্ষিণ ভারতে খলজিদের আধিপত্য বিস্তারে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেন সেনাপতি মালিক কাফুর। এই সময় দক্ষিণ ভারতে চারটি হিন্দুরাজ্য ছিল-দেবগিরির যাদব, বরঙ্গলের কাকতীয়, দ্বারসমুদ্রের হোয়সল এবং সুদূর দক্ষিণের পাণ্ড্যগণ।       ১৩০৭ খ্রিস্টাব্দে আলাউদ্দিন খলজি দেবগিরির বিরুদ্ধে মালিক কাফুরের নেতৃত্বে সামরিক অভিযান শুরু করেন। দেবগিরিরাজ রামচন্দ্রদেব কর দেওয়া বন্ধ করেছিলেন এবং গুজরাটের রাজা কর্ণদেবকে আশ্রয় দিয়েছিলেন, এই অভিযোগে আলাউদ্দিন খলজি দেবগিরি আক্রমণ করেন। রামচন্দ্রদেব যুদ্ধে পরাজিত হয়ে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর ১৩...

সপ্তদশ শতাব্দীতে আমস্টারডম কেন সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল।

আমস্টারডম গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পরিণত হত্তয়ার কারণ                     নেদারল্যান্ডের  বিদ্রোহ বা  ওলন্দাজদের স্বাধীনতা যুদ্ধ ইউরোপের ষোড়শ  শতাব্দীর  ইতিহাসের অন্যতম ঘটনা। এই যুদ্ধের  ফলেই নেদারল্যান্ড ও হল্যান্ডের যুক্তপ্রদেশ বিরাট বাণিজ্যিক দেশে পরিণত হয়। তবে স্বাধীনতা প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গেই এই পরিবর্তন সম্ভব হয়নি। তাদের এই পরিবর্তন আনয়ন করতে প্রায় এক শতাব্দী সময় লেগেছিল। অত্যন্ত অধ্যবসায়ের সঙ্গে ওলন্দাজগণ তাদের অগ্রগতি অব্যাহত রাখে এবং স্পেনের পরিবর্তে আর একটি বিরাট অর্থনৈতিক বাজার সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়। তবে স্বাধীনতাই ছিল তাদের উন্নতির মূল চাবিকাঠি। স্বাধীনতালাভের সঙ্গে সঙ্গে নেদারল্যান্ডের আধিবাসীদের মনে একটি নতুন জাতীয় চেতনার সৃষ্টি হয় এবং নেদারল্যান্ডকে ইউরোপের অন্যতম প্রধান শক্তিতে পরিণত করার জন্য সেদেশের সকল অধিবাসীই সচেষ্ট হয়। তবে সমকালীন পরিস্থিতি তাদের অনুকূলে থাকার জন্য নেদারল্যান্ডের উন্নতির পথের সকল বাধা দূর করা সম্ভব হয়। ইংল্যান্ডের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল তাদের উন্নতির অন্যতম প্রধান কা...

রাজিয়া কেন ব্যর্থ হয়েছিল ?

রাজিয়ার ব্যার্থতার কারণ           ইলতুৎমিস তাঁর জীবদ্দশায় কন্যা রাজিয়াকে দিল্লীর সিংহাসনের উত্তরাধিকারীরূপে মনোনীত করেন। কিন্তু সুলতানের দরবারের প্রভাবশালী আমিরগণ রাজিয়ার দাবি অগ্রাহ্য করে ইলতুৎমিসের পুত্র রুকন-উদ্-দিন ফিরোজকে সিংহাসনে স্থাপন করেন। তবে রুকন-উদ্-দিন ফিরোজের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মুলতান, বাদাউন, হান্সি, লাহোর প্রভৃতি স্থানের শাসকগণ বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন এবং সসৈন্যে দিল্লীর দিকে অগ্রসর হন। রুকন-উদ্‌-দিন ফিরোজ তাদের বাধা দিতে গিয়ে যুদ্ধে নিহত হলে দিল্লীর কিছু সংখ্যক আমির এবং সাধারণ লোকদের সমর্থনে রাজিয়া দিল্লীর সিংহাসনে আরোহণ করেন (১২০৬-১২৪০ খ্রিস্টাব্দ)।         তবে পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে রাজিয়া সিংহাসনে আরোহণ করলেও নিষ্কলঙ্কভাবে ক্ষমতা ভোগ করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। কঠোর হস্তে শাসনকার্য পরিচালনা করতে শুরু করলে সুলতানী রাজিয়ার বিরুদ্ধে তুর্কী আমিরগণের মধ্যে অসন্তোষ পুঞ্জীভূত হতে শুরু করে। কুতব- উদ-দিন আইবকের আমল থেকেই সুলতানী সাম্রাজ্যের সামরিক ও শাসনতান্ত্রিক সকল ক্ষমতাই তুর্কী আমিরদের হস্তগত ছিল। কিন্তু রাজিয়া দৃঢ়হস্তে সমগ্র শাসন ...